News: MAHFIL ROUTINE: 1. Yearly Mahfil a. Eid E Miladunnabi (Sallallahu Alaihi Wa Sallam)11Rabiul Aeull b. Eid E Miladul Wajeeh (Radhiallahu Anhu) 11jilkad 2. Monthly Mahfil a.The Holy Ashura b. The Akheri Chahar Somba c. Mi’rajunnabi (Sallahu Alaihi Wa Sallam)Night d. Lailatul Barat e. Lailatul Qadr f. 18th ramadan- Iftar Mahfil (Darbar’s) g. 18th Ramadan- Iftar Mahfil (RANI MA’s) h. 29th Zilhajj- (night) Khandakar Qari Mohammad AbulHashem (radhiallahu Anhu)’s Isal ESawab Mahfil i. 11th Rabius Sani (night)Fateha E Iyazdahm And Umme Hani (RANI MA) (RadiallahuAnha)’s Isal E Sawab Mahfil 3.Weekly Mahfil Every Thursday after ‘Isha- Zikr, Milad And Qiyam Mahfil Other Mahfils a. Salatul Jum’a b. Eid ul Fitr c. Eid ul Azha d. Afarafa Day Mahfils For Bangladesh Affairs Routine: a. Independence Day of Bangladesh, 26th March b. Victory Day of Bangladesh, 16th December c. International Mother Language Day and National Shaheed Day, 21th February d. Death Anniversary of Shahid President Ziaur Rahman, 30th May d. National Mourning Day and Death Anniversary of Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, 15th August

Thursday, March 15, 2018

ঈদে মিলাদুননবী নিয়ে ইমাম মুজতাহিদগনের অভিমত।

ঈদে মিলাদুননবী নিয়ে ইমাম মুজতাহিদগনের অভিমত।

ইমাম মুজতাহিদগনের অভিমত সমূহঃ
১. প্রসিদ্ধ তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন-
ﻗﺎﻝ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻋﻨﻪ ﻭﺩﺩﺕ ﻟﻮ ﮐﺎﻥ
ﻟﯽ ﻣﺜﻞ ﺟﺒﻞ ﺍﺣﺪ ﺫﮬﺒﺎ ﻓﺎﻧﻔﻘﺘﻪ ﻋﻠﯽ ﻗﺮﺍﺀﺓ ﻣﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ
ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﯿﻪ ﻭﺳﻠﻢ
অর্থাৎ- যদি আমার উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে আমি তা রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এঁর ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাহফিলে খরচ করতাম।
[সূত্রঃ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১।]

২. হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ উপস্থিত হয়ে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেছে, সে ঈমানের সফলতা লাভ করেছে।
[সূত্রঃ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১।]

৩. হযরত মারুফ কারখী (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি) বলেন যে ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে পানাহারের আয়োজন করে মুসলিমদের ভাইদের একত্রিত করে, আলোকসজ্জা করে, নতুন পোষাক পরিধান করে এবং খুশবো, আতোর, গোলাপ ও লোবান প্রয়োগে নিজেকে সুগন্ধিযুক্ত করে; রোজ কিয়ামতে প্রথম শ্রেণীর নবীদের সাথে তার হাশর হবে এবং ইল্লীঈনের সর্বোচ্চ স্থানে সে অবস্থান করবে।
[সূত্রঃ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১১।]

৪. শাফেঈ মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম শাফেঈ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যদি কোন ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে মুসলিম ভাইদেরকে খাবার তৈরী করে মজলিসে আপ্যায়ন করে ও ইবাদাত সম্পন্ন করে, রোজ কিয়ামতে সিদ্দীকিন, শাহাদা ও সালেহীনদের সাথে তার হাশর হবে এবং জান্নাতুন নাঈমে সে অবস্থান করবে।
[সূত্রঃ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-১৩।]

৫. ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তিনি তার স্ব-রচিত আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইলগ্রন্থে উল্লেখ আরও করেন, “যে গৃহে বা মসজিদে কিংবা মহল্লায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন অবশ্যই সে গৃহ বা মসজিদ বা মহল্লা অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উক্ত স্থান সমূহে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য তারা সালাত পাঠ করে। (অর্থাৎ তাদের গুণাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভূষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ও আজরাঈল আলাইহিস সালাম মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মাহফিল আয়োজনকারীর গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন
তিনি আরো বলেন, “যে মুসলমানের গৃহে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ পাঠ করা হয়, সে গৃহ ও গৃহে বসবাসকারী ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নি, পানি, পরনিন্দা, কুদৃষ্টি ও চুরি ইত্যাদির আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবেসে ঘরে যার মৃত্যু হবে সে মৃত ব্যক্তি কবরে মুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তর অতি সহজে দিতে পারবে। যে ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ কে সম্মান করতে চায়, তার জন্য ইহাই যথেষ্ট। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদের কোন মর্যাদা নেই, তার অন্তর এত নিকৃষ্ট হয়ে পড়বে যে, তার সামনে হুযুরপুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশ্বজোড়া প্রশংসাগীতি উচ্চারিত হলেও তার অন্তরে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য বিন্দুমাত্র মুহাব্বতের উদ্রেক হবে না
[সূত্রঃ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩ ও ১৪।]

৬. বুখারী শরীফের ব্যাখাকার বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি (মৃত্যুঃ ৯২৩ হিজরী) বলেন-
যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের মোবারক মাসের রাতসমূহকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তার উপরে রহমত বর্ষণ করেন। আর উক্ত রাত্রকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করবে এ জন্য যে, যাদের অন্তরে (নবী বিদ্বেষী) রোগ রয়েছে। তাদের ঐ রোগ যেন আরো শক্ত আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় অন্তর জ্বলে পুড়ে যায়
[সূত্রঃ শরহে জুরকানী আলাল মাওয়াহেব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬২।]

৭. হযরত সাররী সাক্বত্বী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন যে ব্যক্তি মিলাদ শারীফ পাঠ বা মিলাদুন্নাবী (সাঃ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করল, সে যেন তার জন্য জান্নাতে রওজা বা বাগান নির্দিষ্ট করল। কেননা সে তা হুজুর পাক (দঃ) এর মহব্বতের জন্যই করেছে।
[সূত্রঃ আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩।]

৮. ক/ প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীব আলেম উপমহাদেশে যিনি হাদীছ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসার করেছেন, ইমামুল মুফাসসিরীন ওয়াল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুক্বাহা হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعطيم والاكرام كان من الفايزين بدار السلام.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের দিবসকে (অর্থাৎ মিলাদুন্নবীকে) তাযীম করবে এবং সে উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করবে সে চিরশান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।” (সুবহানাল্লাহ্)
[সূত্রঃ ইবনু নাবাতা, আল বাইয়্যিনাত ১৫৯/৩০)।]

খ/ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মোহাদ্দিস হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি আরও বলেন-
যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রাত্রকে ঈদ হিসেবে পালন করে, তার উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন। আর যার মনে হিংসা এবং [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুশমনির] রোগ রয়েছে, তার ঐ (নবী বিদ্বেষী) রোগ আরও শক্ত আকার ধারণ করে
[সূত্রঃ মা সাবাতা বিসসুন্নাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা
নং-৮৬।]

৯. যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম যাহাবী (রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি) প্রায় ৬০০ বছর আগে মিলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و) এঁর মাহফিল এবং প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে মিলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و) উদযাপনকারী বাদশাহ মুজাফফর (রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি) এঁর উচ্চ প্রশংসা করেছেন এভাবেঃ
"মালিক মুজাফফর (রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি) এঁর দ্বারা আয়োজিত মীলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و) এঁর মাহফিলের বর্ণনা দেওয়ার মত ভাষা নাই। আরব এবং ইরাক এর লোকেরা খুশির সাথে মাহফিলে যোগদান করত। তিনি একজন ধার্মীক সুন্নি ছিলেন এবং তিনি ফুক্বাহা ও মুহাদ্দিসগণকে অনেক ভালবাসতেন।" (সুবাহানাল্লাহ)
[সূত্রঃ ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ভলিউম ৪৫, পৃষ্ঠা ৪০২-৪০৫ দার আল-কুতুব আল-আরাবি প্রকাশনী, বেইরুত/লেবানন)।]

১০. ভারত উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলেম শাহ ওলীউল্লাহ মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি) প্রায় ৩০০ বছর আগে নিজের রচিত ফুইউজুল
হারামাইনকিতাবের ৮০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
ﻭﻛﻨﺖ ﻗﺒﻞ ﺫﻟﻚ ﺑﻤﻜﺔ ﺍﻟﻤﻌﻈﻤﺔ ﻓﻰ ﻣﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻰ
ﻳﻮﻡ ﻭﻻﺩﺗﻪ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺬﻛﺮﻭﻥ
ﺍﺭﻫﺎﺻﺎﺗﻪ ﺍﻟﺘﻰ ﻇﻬﺮﺕ ﻓﻰ ﻭﻻﺩﺗﻪ ﻭﻣﺸﺎﻫﺪﻩ ﻗﺒﻞ ﺑﻌﺜﺘﻪ ﻓﺮﺃﻳﺖ ﺍﻧﻮﺍﺭﺍ
ﺳﻄﻌﺖ ﺩﻓﻌﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻻ ﺍﻗﻮﻝ ﺍﻧﻯﺎﺩﺭﻛﺘﻬﺎ ﺑﺒﺼﺮﺍﻟﺠﺴﺪ ﻭﻻ ﺍﻗﻮﻝ ﺍﺩﺭﻛﺘﻬﺎ
ﺑﺒﺼﺮ ﺍﻟﺮﻭﺡ ﻓﻘﻂ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ
ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻥ ﺍﻻﻣﺮ ﺑﻴﻦ ﻫﺬﺍ ﻭ ﺫﻟﻚ ﻓﺘﺄﻣﻠﺖ ﺗﻠﻚ ﺍﻻﻧﻮﺍﺭ ﻓﻮﺟﺪﺗﻬﺎ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ
ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺍﻟﻤﺆﻛﻠﻴﻦ ﺑﺎﻣﺜﺎﻝ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪ ﻭﺑﺎﻣﺜﺎﻝ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﺠﺎ ﻟﺲ ﻭﺭﺍﻳﺖ
ﻳﺨﺎﻟﻄﻪ ﺍﻧﻮﺍﺭ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺍﻧﻮﺍﺭ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ
‏( ﻓﻴﺾ ﺍﻟﺤﺮﻣﻴﻦ ৮০ )

অর্থাৎঃ আমি ইতোপূর্বে হযরতের আগমনের (মিলাদুন্নবীর) দিবসে মক্কা শরীফে উপস্থিত ছিলাম এবং লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন, তাঁর পয়দায়েশের সময় যে অলৌকিক ঘটনাবলী প্রকাশিত হয়েছিল ও তাঁর নবুয়ত লাভের আগে যে সমস্ত
ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছিল, সেসব উল্লেখ করছিলেন, এমতাবস্থায় আমি কতগুলো নূর হঠাৎ প্রকাশিত হতে দেখলাম, আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং ইহাও
বলতে পারি না যে, এগুলো কেবলমাত্র অন্তরচক্ষুতে দেখেছিলাম।
এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কী ছিল, তা আল্লাহপাকই সমধিক অবগত আছেন।
তারপর আমি এই নূরগুলি সম্পর্কে চিন্তা করে বুঝলাম যে, ফেরেশতাগণ এ প্রকারের ঘটনাবলী ও মজলিশসমূহের জন্য নিয়োজিত হয়েছেন, এগুলো তাঁদের নূর, আরো দেখতে পেলাম যে, ফেরেশতাগণের নূরগুলোর সাথে আল্লাহর রহমতের নূরগুলো মিলিত হচ্ছে।"
[সূত্রঃ শাহ ওলীউল্লাহ মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি) : ফুইউজুল হারামাইন’, ৮০ পৃষ্ঠা।]
উপরোক্ত ঘটনার আলোকে আমাদের সামনে কয়েকটি বিষয় সুষ্পষ্ট হলঃ
(ক) মক্কা শরীফে প্রতি বছর মুসলমানগণ মিলাদুন্নবী মাহফিল আয়োজন করে থাকেন।
(খ) শাহ অলি উল্লাহ
মুহাদ্দিসে দেহলভী (ররহমাতুল্লহি 'আলাইহি) মক্কা শরীফে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে যোগদান করেছিলেন।
(গ) শাহ অলি উল্লাহ
মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহমাতুল্লহি 'আলাইহি) মিলাদুন্নবী মাহফিলকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। এ কারণেই তিনি মক্কা শরীফে আয়োজিত মিলাদুন্নবীর মাহফিলকে ত্যাগ করেননি।
(ঘ) মিলাদুন্নবীর মাহফিলেল আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতাগণ এবং আল্লাহ তায়ালার রহমতের নূর নাজিল হয়ে থাকে।
(সুবাহানাল্লাহ)

১১. হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব রদ্দুল মুহতার আলা দুররুল মুখতারকিতাবে বর্ণিত আছে,

أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ
অর্থাৎ রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাত, অতপর লাইলাতুল কদরের রাত, অতপর মিরাজ শরীফের রাত, অতপর আরাফার রাত, অতপর জুমুয়ার রাত, অতপর ১৫ শাবানের রাত, অতপর ঈদের রাত।
[সূত্রঃ রদ্দুল মুহতার আলা দুররুল মুখতার ৮/২৮৫ (শামেলা) (ফতোয়ায়ে শামী), পুরাতন ছাপা ৫০৫ পৃষ্ঠা।]

উক্ত কওল শরীফ হানাফী মাযহাবের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার কিতাব রদ্দুল মুহতারবা "ফতোয়ায়ে শামী" তে থাকার মাধ্যমে এটা মাযহাবের একজন নির্ভরযোগ্য ইমামের ফতওয়া হিসেবে সাব্যস্ত হচ্ছে। 
কাজেই কেউ হানাফী মাযহাবের অনুসারী হলে তাকে অবশ্যই এই ফতওয়া মানতে হবে।
সুতরাং, এরপর থেকে বিশ্ববিখ্যাত মনিষীগণের বক্তব্য অস্বীকার করে পথেঘাটের কাঠমুল্লা ছাটমুল্লাদের কথা শুনে আর কেউ মিলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و)'কে সিরাতুন্নবী (صلى الله عليه و آله و) বলে এবং মিলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و) পালন করাকে হারাম, বেদাত, গুনাহর কাজ ইত্যাদি বলে বেঈমান, মুনাফেক হবেন না।

এখন যারা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করাকে শিরক, হারাম ও বিদয়াত ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে থাকেন তাদেরকে উপরোক্ত মুহাদ্দীসের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য নসিহত করা গেল।
তাদের থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করার আহ্বান করা গেল।
তাদের ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে অবদান না থাকলে, আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান আলেমগণ হাদীস কি শাস্ত্র তাও চিনতেন না।
_______________________
আলোচনা মীলাদুন্নবী ও নাত-কবিতা মীলাদ শরীফঃ
মীলাদের কথা "বালাগাল উলা বিকামালিহি....
....সাল্লু 'আলাইহি ওয়া আলিহি" পাঠে উত্থাপিত আপত্তির খণ্ডন
: আল্লামা শায়খ সা'দী রহ. এঁর ঈমানদারি।
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1742225726092865
_______
ইসলামে কাব্য, কবিতা, কাব্য চর্চা : না'তে রাসূল "মীলাদ শরিফ" কবিতার নামhttps://www.facebook.com/images/emoji.php/v9/f1b/1/16/1f4d3.png📓
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1752892828359488
_________
আসুন, সবে নিচের মীলাদটি শিখে মীলাদ পড়ি (গাহি) :
Mere Nabi Pyaray Nabi by Junaid Jamshed (আমীরে তাবলীগ জামাআত); size 5.47MB, Duration: 00:04:49minutes
http://almodina.com/music/view/16266903
আসুন, সবে মীলাদ পড়ি।
__________
না'ত কবিতা মীলাদ শরীফ দাঁড়িয়ে পাঠ করা বা মীলাদে ক্বিয়াম করা আদাব; না দাঁড়ানো বেআদাবী।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1885332218448881
______________
নূরনবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর শানে সাহাবী (রাঃ)'র পঠিত অপূর্ব সুন্দর না'ত কবিতা মীলাদ খানি।
https://m.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1877842909197812
___________
কথোপকথন : সহিহ্ বিনোদন
প্রসঙ্গ "মীলাদ"।
________
# ওহহাবী আহলে বেহুঁশ : tik ace milad na korle jodi hoi ohabi milad koira trA hoi le lahabi
# আহলুস সূন্নাহ্ : (কথোপকথন লিংকে)
https://m.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1735621400086631
_____
"মীলাদের পক্ষে" : "মীলাদের বিপক্ষে"
[ছড়িয়ে দিন সবখানে।]
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1799805600334877
______
আলোচনা মীলাদুন্নবী ও নাত-কবিতা মীলাদ শরীফঃ
প্রিয়নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর পবিত্র মীলাদ বা শুভাগমন ১২ই রবিউল আউয়াল; অন্য মত গ্রহনযোগ্য নয়।
____
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1704426256539479

ইসলামে কাব্য, কবিতা, কাব্য চর্চা : না'তে রাসূল "মীলাদ শরিফ" কবিতার নামhttps://www.facebook.com/images/emoji.php/v9/f1b/1/16/1f4d3.png📓
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1752892828359488

মীলাদের মাহফিলে আল্লাহ্ (سبحانہ و تعا لی) এঁর সাথে সবাই সালাম পেশ করবো : আয়োজনে আল্লাহ্ (سبحانہ و تعا لی)
________
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1704298899885548

হাফিযুল হাদিস আল্লামা আবুল ফিদা ইসমাইল ইবনূ কাসীর রহ. এঁর নূরানী বয়ান "মওলিদু রাসূলুল্লাহ্ (صلى الله عليه و آله وسلم)" ব্যানারে মাহফিল এর মূল আরবী, ইংরেজী ও বাংলা download লিংক্স :
____
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1705332613115510

হাফিযুল হাদিস আল্লামা আবুল ফিদা ইসমাইল ইবনূ কাসীর রহ. এঁর নূরানী বয়ান "মওলিদু রাসূলুল্লাহ্ (صلى الله عليه و آله وسلم)" ব্যানারে মীলাদুন্নাবী মাহফিল।
___
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1705109596471145

প্রসঙ্গ- প্রিয়নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর নুবূয়্যাত কখন থেকে?
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1701002633548508
_________
মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর দরবারে জিবরীল (আ:)-এঁর হাজিরাঃ জিবরীল (আ:) মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর খাদেম।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1883105328671570
__________
না'ত কবিতা মীলাদ শরীফ দাঁড়িয়ে পাঠ করা বা মীলাদে ক্বিয়াম করা আদাব; না দাঁড়ানো বেআদাবী।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1885332218448881
______________
পাঠককে বলাঃ আপনি যদি হক নাহক, সত্য অসত্য বুঝার জন্য পড়েন তবে আর কিছু পড়া লাগবে না। সামান্য কথাতেই আপনি বুঝতে পারবেন কথিত আহলে হাদীস কি?
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1883252818656821
____________
 — feeling Ishq E Ahle Bayt E Rasule Karim Sallallahu 'Alaihi Wa Aalihi Wa Sallam💎 with আনোয়ারা গাউছিয়া হাসেমী কমিটিMD Sabbir Hasan ZiLanyAhmadullah Shameem Vandary and78 others.




ওহাবী গুরু ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর ঈদে মীলাদুন্নবীর পক্ষে ফতোয়া।
প্রিয় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى»
নিশ্চয় প্রত্যেক কাজ এর লক্ষ্যের সাথে সম্পৃক্ত, আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে-যা সে ইচ্ছা করেছে
[
সূত্রঃ বুখারী, হা/১।]
আভিধানিক অর্থের গন্ডি পেড়িয়ে পারিভাষিক ব্যবহারে মীলাদুন্নবী মুসলিম উম্মাহর বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ।
পারিভাষিক অর্থে মীলাদুন্ননবী বলতে সমগ্র জগতের জন্যে মানবতার চরম ক্রান্তিকালে প্রেরিত দয়াপরবশ আল্লাহ্ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হিসেবে দয়াপরবশ নবীজীর শুভাগমন বা মীলাদ এঁর স্মরণে আল্লাহ্ পাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের নিয়তে নবীজীর জিকির বা আলোচনা করা, জিকির বা আলোচনার ব্যবস্থা করা, আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভিপ্রায়ে ফজিলতপূর্ণ কাজের মাধ্যমে তাঁর জিকিরকে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সমুন্নত করা বুঝায়।
আরবী মাস সমুহের মাঝে রবিউল আউয়াল ও মীলাদুন্নবীর এক ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় সংযোগ রয়েছে।
বছর ঘুরে রবিউল আউয়ালের আগমনের আগাম বার্তা মীলাদুন্নবী নামক মহান নেয়ামতের স্মরনকে রবিউল আউয়ালের আগমনে তারই বিশেষত্বের কারনে মুমিনের হৃদয়পটে পুন:পুন:কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাকিদ সৃষ্টি করে।
মুসলিম উম্মাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ যে নেয়ামতটি মহান আল্লাহ্ পাক থেকে লাভ করেছে তা হচ্ছে মহান আল্লাহ্ পাকের প্রেরিত মানবতার মুক্তির দিশারী নবীর শুভাগমন তথা মীলাদ বা মীলাদুন্নবী।
নেয়ামতের শোকর জ্ঞাপনে সময় কালের কোন বাধ্যবাধকতা নেই, চিরকালীনই করা যায়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দাবীই তাই। আজীবন কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়।
আর অনুগ্রহ করার শুভ দিনকে স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলাই নিজের দিবস বলে ঘোষনা দিয়েছেন। ঘোষনাই কেবল কি দিয়েছেন! বরং আল্লাহর দিবস সমূহকে স্মরন করে কৃতজ্ঞতা জানানোর নির্দেশও তিনিই দিয়েছেন।
তাই যুগে যুগে আল্লাহর বান্দাগণ সমসাময়িক কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাবধারায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। ফজিলতপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেছে।
বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারাই স্বীকার করবে তাদের একমাত্র পছন্দনীয় ইমাম হচ্ছে ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী।
ওয়াহাবীরা তাবেয়ী যুগের সেরা ইমাম, ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে শুরু করে সকল ইমাম মুস্তাহিদ আওলিয়ায়ে কিরামের বিরোধীতা করলেও ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদীর মতাদর্শেরই ধ্বজাধারী, তাদের বিরোধীতা করে না। 
কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সেই তাদেরই কোন ফতোয়া যদি নিজেদের মন মত না হয় তবে সেটা সযত্নে গোপন করে রাখে। কিন্তু সত্য কি গোপন রাখা যায়?
ওহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩খৃঃ ১৩২৮খৃঃ) তার কিতাব ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীমএ লিখেছে,
যদি মিলাদ মাহফিল নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়ে থাকে তবে আল্লাহ এ মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে সওয়াব বা প্রতিদান দেবেন। 
দলীলঃ 
ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৩।
একই কিতাবের অন্যত্র সে লিখেছে, 
বরং ঐ দিনে (রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মদিনে) পরিপূর্ণরূপে অনুষ্ঠান করা এবং এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, উত্তম নিয়ত এবং হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত প্রদর্শন বড় প্রতিদানের কারন হবে। 
দলীলঃ 
ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৫।
মাজমা' ফাতাওয়ী : ইবনে তাঈমিয়া, খন্ড ২৩, পৃঃ ১৬৩।
ইবনে তাঈমিয়া আরও বলেছেন, 
মীলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর দিনে মীলাদুন্নাবী (صلى الله عليه و آله و سلم) উদযাপনকারীরা তাদের বিশুদ্ধ কাজগুলোর জন্যে পুরষ্কৃত হবে, যেমন- ঈদে মীলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) উপলক্ষে তাদের সম্পাদিত আল্লাহর সে সকল ইবাদাতগুলো যা তারা করে থাকে
সূত্রঃ ঈক্তিদা সীরাত আল মুস্তাকিম।
তিনি আরো বলেছেন,
“....
মুস্তাহীদই হোক, কিংবা মুস্তাহীদের মুকাল্লিদই হোক, যে মীলাদুন্নবীর আলোচনার চর্চা করবে তার জন্যে পুরষ্কার রয়েছে...এ চর্চায় সম্পাদিত কাজগুলো অবশ্যই শরীয়ত বিরোধী হবে না
সূত্রঃ ঈক্তিদা সীরাত আল মুস্তাকিম।
ইবনে তাইমিয়া নিজের সেই একই কিতাব আল-সীরাত আল-মুস্তাকীম’ (২৬৬ পৃষ্ঠা) পুস্তকে বলেছে: অনুরূপভাবে, খৃষ্টানদের যীশু খৃষ্টের (হযরত ঈসা আ:) জন্মদিন পালনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরুপ হোক কিংবা মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপই হোক, মুসলমান সমাজ মীলাদ অনুষ্ঠানে যা আমল করেন তাঁদের এই ধরনের এজতেহাদের জন্যে আল্লাহ পাক অবশ্যই তাঁদেরকে পুরস্কৃত করবেন। 
ইবনে তাইমিয়া অতঃপর লিখেছে, 
মীলাদ যদিওবা সালাফ (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মাগণ) কর্তৃক আচরিত হয় নি, তথাপি তাঁদের তা অনুশীলন করা উচিত ছিল। কেননা, শরীয়তের দৃষ্টিতে এর বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি ছিল না।এখানে ইবনে তাইমিয়া ধর্মীয় গোঁড়ামি বাদ দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর রেযামন্দি হাসিলের কথা বলেছে। 
[
ঈক্তিদা]
ইবনে তাইমিয়া যা বলেছে ওই উদ্দেশ্যেই, অর্থাৎ মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ”- ই এই ভালোবাসা ও নেক উদ্যোগের জন্যে আল্লাহতালা আমাদের পুরস্কৃত করুন, আমীন! আল্লাহ্ তাকেও পুরস্কৃত করুন যে ব্যক্তি বলেছিল - খৃষ্টানরা তাদের নবী সম্পর্কে যা দাবি করে তা বাদই দিন, আপনারা যেভাবে চান মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রশংসা করতে পারেন এবং তাঁর সত্তা মোবারকের প্রতি সকল গুণ/বৈশিষ্ট্য ও তাঁর মর্যাদার প্রতি সকল মাহাত্ম্য আরোপ করতে পারেন; কেননা তাঁর অসীম গুণাবলী ভাষায় ব্যক্ত করা যে কোনো বক্তার পক্ষেই সাধ্যাতীত।
ইবনু তাইমিয়ার আরেকটি কথাতো এরুপ যে, তা কোন কোন ক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত না হলেও সওয়াব পাওয়া যাবে; সেটি হলো, 
من كان له نية صالحة اثيب علي نيته وان كان الفعل الذي فعله ليس بمشروع- اذا لم يتعمد مخالفة الشرع-
অর্থাৎ নিয়ত ঠিক থাকলে আর শরীয়তের বিরোধিতা করার ইচ্ছা না থাকলে সে যে কাজ করছে, তা যদি শরীয়ত সম্মত নাও হয়, তবুও সে ছওয়াব পাবে 
(
ঈক্তিদা)
এখন বলুন, ইবনু তাইমিয়ার এ কথা দ্বারা আমাদের সমাজে প্রচলিত কী কী শরীয়তবিরোধী কাজে উৎসাহ দেয়া হল?
ওহাবীদের অপর নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর (১৭০৩খৃঃ-১৭৯২খৃঃ) তার কিতাব মুখতাসার সিরাতে রাসুলএ লিখেছেন, “কট্টর কাফির আবু লাহাব রাসুলে কারিমে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র জন্মের সুসংবাদ শুনে মনের খুশীতে নিজ দাসী সুয়ায়বাহকে (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) মুক্তি দেয়ার কারনে সে প্রতি সোমবার (নবীজীর বেলাদত শরীফের দিন) দোযখে থেকেও শান্তিদায়ক পানীয় পেয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, আব্দুল ওহাব নজদী আবু লাহাবের শাস্তি হ্রাসের বিষয় উল্লেখ করে মিলাদুন্ননবী (صلى الله عليه و آله و سلم) পালনের গুরুত্বের কথা স্বীকার করে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, তিনি শামসুদ্দীন নাসের দামিস্কির কিতাব মওরদুস সাদী ফি মওলদিল হাদীথেকে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে এবং সেখানে দামিস্কির রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত শেরটিও হুবহু উদ্ধৃত করেছে।
বিরোধিতাকারীরা কুরআন শরীফের দলীল মানে নাতাফসিরের দলীল মানে নাহাদীস শরীফ এর দলীল মানে না ইমাম মুস্তাহিদের ঐক্যমত্যের দলীল মানে না…. মানবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারন অস্বীকারকারী দুনিয়াতে সব সময়ই ছিলো, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। 
__________________


পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন।
প্রিয় পাঠক, প্রথমেই উদযাপন শব্দটি নিয়ে আলোকপাত করা যাক।
দেখুন, উদযাপন শব্দটির অর্থ হচ্ছে মানব জীবনে কোন তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, কোন অনুগ্রহ প্রাপ্তির দিন, কিংবা কোন খুশির লগ্ন, বা শুভক্ষণ বা ঘটনাকে ব্যক্তিগতভাবে বা সামাজিকভাবে সমাজের সকলে মিলে সকলের অংশগ্রহণে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বছরের নির্দিষ্ট দিনে, কিংবা আনন্দ প্রকাশের মাধ্যমে সম্পাদন করা, চর্চা করা, স্মরণ করা, আলোচনা করা।
আর এই সম্পাদন, চর্চা, স্মরণ, আলোচনা বা আলোচনার ব্যবস্থাই হচ্ছে উদযাপন। এই উদযাপন উদযাপিত হয় বিভিন্ন স্মরণানুষ্ঠান বা স্মরণ সভার মাধ্যমে।
পবিত্র রবিউল আউয়ালে এই বিশ্ব ভূবনে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ঘোর অমানিশাকালে মানবতার মুক্তির দিশারী হিসেবে খাতামুন নাবিয়্যিন, রউফুর রহীম হুজুর কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) এই ধরিত্রীতে তাশরীফ রাখেন।
দিনটি সৃষ্টিজগতে অতীব তাৎপর্যবহ, তা এ কারণে যে হুজুর কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর শুভাগমন দিনটি আল্লাহ্ (سبحانه و تعالى) এঁর অনুগ্রহরাজীর মধ্যে অদ্বিতীয়, সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ। এ অনুগ্রহ প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা চিরকাল করা হলেও সে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অপূর্ণই থাকবে। 
হুজুর কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর শুভাগমন ঐতিহাসিকভাবেও ঘটনাবহ। কাজেই ঈমানদারদের হৃদয় পটে প্রতি বছরই এ দিনটির স্মৃতি জাগ্রত হয়।
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পরিচয়ঃ
ঈদ-এ মিলাদুন্নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে এ ধরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শুভ আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং এ অদ্বিতীয় নিয়ামত পাবার কারণে সৎকাজ ও ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা বুঝায়।
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন পদ্ধতিঃ
প্রিয় পাঠক, বর্তমান যুগে কেহ কেহ বলে থাকেন, আমাদের দেশে প্রচলিত মিলাদ আর পূর্বযুগের মিলাদ এক নয়। এদুয়ের পার্থক্যের একটা মেরুদন্ড নির্মাণ করে তারা প্রচলিত মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে অবৈধ, হারাম ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে থাকে। বিষয়টি খোলাসা করা প্রয়োজন।
আমাদের দেশের মিলাদ-মাহফিল বলতে কি বুঝায়? বলবেন, মানুষদের একত্রিত হওয়া, সম্মেলন করা, জুলুস তথা শোভাযাত্রা বের করা, আনন্দ প্রকাশে নাতে রাসুল পরিবেশন করা, নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর শান-মান আলোচনা করা, কুরআন-খানি ও দরূদ শরীফ তেলাওয়াত করা, দান-সদকা ও তাবাররুকাতের ব্যবস্থা করা, লাইটিং ও ডেকোরেশন করে মাহফিলটাকে মনোগ্রাহী সাজে সাজানো সর্বোপরী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর প্রতি প্রেম ভালবাসা প্রদর্শন করা ইত্যাদি। এ-ই আমাদের দেশের বর্তমানকার মিলাদ মাহফিলের পদ্ধতি ও কর্মসূচী।
এবার পূর্ববর্তী কয়েকজন ওলামায়ে কেরামের প্রদত্ত পদ্ধতি তুলে ধরা হলো, যাদের গ্রহণযোগ্যতা সর্বকালে, সর্বযুগে এবং প্রশ্নাতীত।
জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ মোল্লা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর কর্মসূচীগুলোকে পর্যায়ক্রমে সাজিয়েছেন এভাবে, 
বিভিন্ন খতম পড়া, অবিরাম কুরআন তেলাওয়াত করা, উচ্চ আওয়াজে নাত বা গজল আবৃত্তি করা, বিভিন্ন প্রকারের বৈধ আনন্দ ও খুশি উদ্যাপন করা এবং উন্নত ভোজন সামগ্রী তথা তাবাররুকাতের এন্তেজাম করা
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, 
মিলাদুন্নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের করণীয়তার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে পূর্বে উল্লেখিত কার্যাদির উপর সীমাবদ্ধতা থাকা, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনের বিষয়টি বুঝা যায়। যেমন- কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা করা, পানাহার করানো, নবীর শান-মান সম্বলিত কবিতা তথা নাতে রাসুল আবৃত্তি করা এবং এমন সব আধ্যাতিক গজল পরিবেশন করা যেগুলো অন্তরাত্মাকে পারলৌকিক কল্যাণকর নেক আমল করতে তাড়িত করে, জাগিয়ে তোলে
হাফিজুল হাদিস আল্লামা শামসুদ্দীন মুহাম্মদ সাখাভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকেও মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের অনুরূপ পদ্ধতি পাওয়া যায়। তিনি মিশর এবং সিরিয়ার মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের পদ্ধতি বর্ণনা করার সময় উপরুক্ত কর্মসূচীগুলোর সাথে উত্তম পোশাক পরিধান করা, পানীয় ব্যবস্থা করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, আলোকসজ্জা করা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেন।
হাদীস শাস্ত্রে আবু জুরআ রাজী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর নাম জানেনা এরকম মুহাদ্দিস পৃথিবীতে এসেছে কিনা সন্দেহ। তিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ছিলেন। ৩৭৫ হিজরীতে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। সমসাময়িক এবং পরবর্তী যুগের সমস্ত মুহাদ্দিস তাঁর নাম শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত করতে বাধ্য হন।
মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর আনুষ্ঠানিকতার শরয়ী পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি যে কথা বলেছিলেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ‘ওলীমার আয়োজন করা এবং মানুষদেরকে আহার করানো সর্বাবস্থায়ই যখন মোস্তাহাব, তখন মর্যাদাপূর্ণ এই রবিউল আওয়াল মাসে নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর নবুয়্যতের নূর প্রকাশিত হওয়ার আনন্দের সাথে উপরোক্ত বিষয়গুলো সংযোজিত হলেতো আর এর বৈধতা ও বরকতময়তার ব্যাপারে প্রশ্নই থাকেনা। সলফে সালেহীন থেকে এ মতামতের বিপরীত কোন কিছুই আমার জানা নেই।
প্রিয় পাঠক! মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে যারা এ যুগের আবিস্কার বলে অপপ্রচার চালায় ইমাম আবু জুরআ রাজী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছ থেকে তাদের নতুন করে সবক নেওয়া উচিত। তিনি দুএক শতাব্দী আগের ইমাম নন বরং সেই হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ। তিনি বিশেষ পদ্ধতিতে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে বৈধ বলে ফতোয়া দিয়ে গেছেন।
সুতরাং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের পদ্ধতিগুলো হল,
১. নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর আগমনের ঘটনাবলী ও শান-মান আলোচনা করা। 
২. সম্মেলন তথা জশ্নে জুলূছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর আয়োজন করা। 
৩. কুরআন তেলাওয়াত, নাতে রাসুল ও গজল আবৃত্তি করা। 
৪. বেশী বেশী নেক আমল করা। 
৫. মানুষদেরকে পানাহার করানো তথা তাবাররুক পরিবেশন ও দান-সদকা করা। 
৬. দরূদ শরীফ পাঠ করা। 
৭. আলোকসজ্জা করা। 
৮. সুগন্ধি ব্যবহার করা। 
৯. আনন্দ উদযাপন করা। 
১০. উন্নত বস্ত্র পরিধান করা ইত্যাদি।
প্রিয় পাঠক, নিম্নের কথাগুলো অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন। তাহলে দেখতে পাবেন, শুধু বর্তমান যুগেই নয় প্রত্যেক যুগেই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপিত হয়ে আসছে। যা কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
মীলাদ (مِيلاد) শব্দটি আরবী। আরবী পরিভাষায় مصدر ميمى (মীম বিশিষ্ট মাসদার)। অন্য আরেকটি শব্দে مَوْلِدْ আছে। এর আভিধানিক অর্থ- জন্ম, জন্মস্থান। 
এ জন্যে মক্কা শরীফে মারওয়া পাহাড়ের পার্শ্বে মাকতাবাতু মাক্কাহ্ আল- মুর্কারামাসাইন বোর্ড সম্বলিত দালানটিকে مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (মাওলেদুন্নবিয়্যি সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলা হয়।
হযরত আহমদ মুহাম্মদ ইলিয়াস গনী তাঁর রচিত تاريخ مكة المصور গ্রন্থেরمَكْتَبَةُ مَكَّةَ الْمُكَرَّمَةِ (اَلْمَوْلُدِ) অংশে সচিত্র উল্লেখ করেন,
وَهِىَ دَارُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وُلِدَ فِيْهَا سَيِّدُنَا مُحَمَّدٌ خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ এটা হচ্ছে খাজা আবদুল্লাহ্ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বাড়ী। এখানে আমাদের সরদার সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন।
পরিভাষায়, হুযূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর শুভ জন্ম বৃত্তান্তকে مِيلاد (মীলাদ) বলা হয়।
আমাদের সঠিক ইসলাম, যাকে আল্লাহ্ তাআলা اِنَّ الدِّيْنِ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلاَمُ বলে আখ্যায়িত করেছেন, এ ইসলামের আলোকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর সম্মানার্থে মীলাদ শরীফ পাঠ করা, ক্বায়েম করা এবং হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামর মীলাদে পাকের কথা স্মরণ করে তাঁর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করে সালাম পেশ করা শুধু বৈধ নয়; বরং উত্তম ও সাওয়াবের কাজ। যেহেতু, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মুহাব্বত করা এ উম্মতের উপর ফরয এবং সর্বাবস্থায় সম্মানের আক্বীদা রাখা, সম্মান প্রদর্শন করা ফরয; যেমন, ক্বোরআনুল করীমে নির্দেশ এসেছে- وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ তোমরা তাকে সাহায্য করবে এবং তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে), সেহেতু মীলাদ-ক্বিয়ামের মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সম্মান দেখানো উত্তম ও সাওয়াবের কাজ। এগুলোকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কর্মকান্ড হিসাবে আক্বীদা রাখা ফরয, যাকে ফিক্বহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায়, ফরযে এতেক্বাদী (فرض اعتقادى) বলা হয়।
বর্তমান মীলাদ শরীফ উদযাপন করার ব্যাপারে বাতিল মতবাদীরা বিভিন্ন অনেক আপত্তি উত্থাপন করে। যেমন- ক্বোরআন, হাদীস ও সলফে সালেহীনের মধ্যে নেই ইত্যাদি অথচ ক্বোরআনুল করীমের পক্ষে প্রমাণ রয়েছে। পবিত্র ক্বোরআনে এ সম্পর্কে বিবরণ রয়েছে। 
আল্লাহ্ তাআলা ক্বোরআনকে تِبْيَانٌ لِكُلِّ شَئٍ (প্রত্যেক কিছুর বর্ণনাকারী) বলেছেন। আর ক্বোরআনে করীমে হুযূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর তাযীম, প্রশংসা, গুণগান ও উত্তম চরিত্র ইত্যাদি বর্ণনার্থেও নাযিল হয়েছে। যেমন, আল্লাহ্ তাআলা বলেন اِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ (নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর আছেন। 
[
সূরা ক্বলম: আয়াত: ৪।]
আম্মা হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার বর্ণনায়خُلُقُه̒ صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ الْقُرْاٰنُ (হুযূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর চরিত্র হচ্ছে ক্বোরআন) এসেছে। তাই মীলাদ ও ক্বিয়াম শরীফও হুযূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর তাযীমরূপী কর্মকান্ডের বাইরে নয়; এর মাধ্যমে পবিত্র ক্বোরআন নাযিল হবার অন্যতম উদ্দেশ্যও বাস্তবায়িত হয়।
এ নিবন্ধে ক্বোরআনের কিছু আয়াতে কারীমা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছি, যেগুলো দ্বারা হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর মীলাদ শরীফ পালন করা শুধু বৈধ বলে প্রমাণিত হয় না, বরং সর্বশ্রেষ্ঠ আমল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
যেমন-
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ ﴿٥٨﴾
তরজমা: হে হাবীব, আপনি বলুন, আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া এবং সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ; তা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়।
 [
সূরা ইয়ূনুস: আয়াত-৫৮, কানযুল ঈমান।]
وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ
তরজমা: এবং তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো, যখন তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ছিলো, তিনি তোমাদের অন্তরগুলোতে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দিয়েছেনআল আয়াত। 
[
সূরা আল-ই ইমরান: আয়াত-১০৩, কানযুল ঈমান।]
وَإِذْ أَخَذَ اللَهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ ﴿٨١﴾
তরজমা: এবং স্মরণ করুন যখন আল্লাহ্ নবীগণের নিকট থেকে তাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো, অতঃপর তাশরীফ আনবেন তোমাদের নিকট রসূল, যিনি তোমাদের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা নিশ্চয় নিশ্চয় তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তাঁকে সাহায্য করবে।এরশাদ করলেন, ‘তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করলে?’ সবাই আরয করলো, ‘‘আমরা স্বীকার করলাম।’’ এরশাদ করলেন, ‘তবে (তোমরা!) একে অপরের উপর সাক্ষী হয়ে যাও এবং আমি নিজেই তোমাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম। 
[
সূরা আল-ই ইমরান: আয়াত-৮১, কানযুল ঈমান।]
قَدْ جَآءَكُم مِّنَ اللَهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ ﴿١٥﴾
তরজমা: নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এসেছে এবং স্পষ্ট কিতাব। 
[
সূরা মা-ইদাহ্, আয়াত-১৫।]
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ ﴿١٢٨﴾
তরজমা: নিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরীফ এনেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে ওই রসূল, যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কাল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুমিনদের উপর পূর্ণ দয়ার্দ্র, দয়ালু। 
[
সূরা আল-ই ইমরান, আয়াত- ১২৮।]
لَقَدْ مَنَّ اللَهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ﴿١٦٤﴾
তরজমা: নিশ্চয় আল্লাহর মহা অনুগ্রহ হয়েছে মুমিনদের উপর যে, তাদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন; যিনি তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন এবং তারা নিশ্চয় এর পূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিলো। 
[
সূরা আল-ই ইমরান, আয়াত- ১৬৪।]
ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপন হুযূর-ই আক্রামের আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। 
যেমন, আল্লাহ্ তাআলা এরশাদ করেন,
أَطِيعُوا اللَهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ
তরজমা: আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তাদের। 
[
সূরা আল-ই ইমরান, আয়াত-৫৯, কানযুল ঈমান।]
অর্থাৎ: যাদের হাতে ঈমান-ইসলামের ক্ষমতা রয়েছে (তথা ইমাম, মুজতাহিদ, শরীয়তের আইনজ্ঞ, মাযহাবের ইমামগণ, তরিক্বতের ইমামগণ) তাঁদের আনুগত্য করো।
মূলত, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর মহান নিমাত। 
যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لاَ تُحْصُوْهَا
তরজমা: এবং যদি তোমরা আল্লাহর নিমাতগুলো বর্ণনা করো, তবে সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। 
[
সূরা ইব্রাহীম: আয়াত-৩৪, কানযুল ঈমান।]
অত্র আয়াতে বর্ণিত নিমাতের কৃতজ্ঞতা আদায় করার জন্যে আল্লাহ অন্য আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন, যা পালন করা অন্যতম ফরয। মিলাদে পাক উদ্যাপন করার মাধ্যমে আল্লাহর ওই নিমাতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। সুতরাং এটা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে মহান ইবাদতে পরিণত। অতএব, এটা ইবাদত, বিদআত নয়। আশ্চর্য! বাতিল ফিরক্বার লোকেরা এমন ইবাদতকে বলে বেড়ায়! তাদের এ কোন্ ধর্ম?
হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম হতে হযরত আব্দুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু পর্যন্ত যুগে যুগে যাঁদের মাধ্যমে হুযূর-ই আক্রামের নূর মুবারক স্থানান্তরিত হয়েছিলো প্রত্যেকে ওই নূরে পাককে নিয়ে আপন পরিবেশে মিলাদ পালন করেছেন।
হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-ই কেরাম কর্তৃক যুগে যুগে এ মীলাদ পালিত হয়ে আসছে।
হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মীলাদ বর্ণনাপূর্বক হাদীস বর্ণনা করেন,
خَرَجْتُ مِنْ نِكَاحٍ وَلَمْ اَخْرُحْ مِنْ سَفَاحٍ مِنْ لَّدُنْ ادَمَ اِلى اَنْ وَلَدَنِىْ اَبِىْ وَاُمِّىْ
অর্থাৎ আমি ইসলামী নিকাহর তরীকা অনুযায়ী জন্মগ্রহণ করেছি এবং হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম হতে আমার পিতা-মাতা পর্যন্ত কারো নিকট কখনো ব্যভিচার পাওয়া যায় নি। 
[
সূত্রঃ ত্বাবরানী, ইবনে আবী শায়বাহ্ দায়লামীর মুসনাদুল ফিরদাউস।]
হুযূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজের মীলাদ শরীফ নিজেই উদযাপন পূর্বক বর্ণনা করেন,
اَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ بْنِ هَاشِمِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ بْنِ قُصَىِّ بْنِ كِلاَبِ بْنِ مَرَّةَ بْنِ مَدْرَكَةَ بْنِ الْيَاسِ بْنِ مُضَرَ بْنِ يَزَارَ وَمَا افْتَرَقَ النَّاسُ فِرْقَتَيْنِ اِلاَّ جَعَلَنِىَ اللهُ فِىْ خَيْرِهِمَا ـ فَاُخْرَجْتُ مِنْ بَيْنِ اَبْوَيْنِ فَلَمْ يُصِبْنِىْ شَئٌ مِّنْ مَهْرِ الْجَاهِلَيَّةِ وَخَرَجْتُ مِنْ نِكَاحٍ وَّلَمْ اُخْرَجْ مِنْ سَفَاحٍ مِّنْ لَّدُنْ ادَمَ حَتّى انْتَهَيْتُ اِلى اَبِىْ وَاُمِّىْ فَاَنَا خَيْرُكُمْ نَفْسًا وَخَيْرُكُمْ اَبًا
[
بَيْهَقِىُّ وَالْبِدَايَةُ وَالنِّهَايةُ]
অর্থাৎ সমস্ত মানুষ দুভাগে বিভক্ত, আল্লাহ্ আমাকে তাদের মধ্যে উত্তম ভাগে রেখেছেন। আমি মাতাপিতার গর্ভে ও ঔরশে জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু আমাকে জাহেলী যুগের কোন অশ্লীলতা স্পর্শ করেনি। আমি আমার মাতাপিতার বিবাহের ফসল। আমি কোন ব্যভিচারের ফসল নই। হযরত আদম থেকে বংশ পরস্পরায় আমার পিতামাতা পর্যন্ত আমি এসেছি। সুতরাং আমি তোমাদের মধ্যে সত্তার দিক দিয়েও উত্তম এবং তোমাদের মধ্যে পিতার দিক দিয়েও উত্তম।
[
সূত্রঃ বায়হাক্বী, আল বিদায়া, ওয়ান্নিহায়া।]
হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজের মীলাদ সম্পর্কে আরো বর্ণনা করেন,
اِنِّىْ عِنْدَ اللهِ مَكْنُوْنٌ خَاتَمُ النَّبِيْيْنَ وَاِنَّ ادَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِىْ طِيْنَتِه وَسَأُ خُبِرُكُمْ بِاَوَّلِ اَمْرِىْ دَعْوَةُ اِبْرَاهِيْمَ وَبَشَارَةُ عِيْسى وَرُؤْيَا اُمِّى الَّتِىْ رَأَتْ حِيْنَ وَضَعَتْنِىْ قَدْ خَرَجَ لَهَا نُوْرٌ اَضَاءَ لَهَا مِنْهُ قُصُوْرُ الشَّامِ [اَلْبَيْهَقِىُّ وَمُسْنَدُ اَحْمَدَ]
অর্থাৎ আমি আল্লাহর নিকট, শেষ নবী হিসেবে গোপন ছিলাম। তখন হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম তাঁর দৈহিক উপাদানে মিশ্রিত ছিলেন আর আমি এখন আমার প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে বলব- আমি হযরত ইব্রাহীমের দো, হযরত ঈসার সুসংবাদ এবং আমার মায়ের ওই চাক্ষুষ দৃশ্য, যা তিনি আমার জন্মের সময় দেখেছিলেন, তাঁর সামনে একটি নূর উদ্ভাসিত হয়েছিলো, যার আলোয় তিনি সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখতে পেয়েছিলেন। 
[
সূত্রঃ বায়হাক্বী, মুসনাদে ইমাম আহমদ।]
হুযূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজের মিলাদ বর্ণনাপূর্বক নিজ সৃষ্টির শুরু সম্পর্কে বর্ণনা করেন,
اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَئَلَ جِبْرَآئِيْلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ يَا جِبْرَائِيْلُ كَمْ عُمْرُكَ مِنَ السِّنِيْنِ؟ فَقَالَ يَارَسُوْلَ اللهِ لَسْتُ اَعْلَمُ غَيْرَ اَنَّ فِىْ الْحِجَابِ الرَّابِعِ نَجْمًا يَطْلَعُ فِىْ كُلِّ سَبْعِيْنَ اَلْفَ سَنَةٍ مَرَّةً وَرَأَيْتُه اِثْنَيْنِ وَسَبْعِيْنَ اَلْفَ مَرَّةٍ فَقَالَ يَا جِبْرَائِيْلُ وَعِزَّةِ رَبِّىْ جَلَّ جَلاَلُه اَنَا ذَالِكَ الْكَوْكَبُ [السيرة الحلبية نقل عن كتاب تشريفات رواه البخارى]
অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জিব্রাঈল, তোমার বয়স কত? তিনি বললেন, আমি তো জানি না, তবে এতটুকু জানি যে, চতুর্থ পর্দায় একটি তারকা সত্তর হাজার বছরের মাথায় একবার উদিত হতো। আমি সেটাকে বাহাত্তর হাজার বার দেখেছি। অতঃপর হুযূর-ই আক্রাম বললেন, হে জিব্রাঈল আমার মহান রবের ইয্যাতের শপথ! আমি হলাম ওই তারকা। [সূত্রঃ সীরাতে হালবিয়া।]
এভাবে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামর মীলাদ বর্ণনা পূর্বক অসংখ্য হাদীসে পাক রয়েছে।
সাহাবা-ই কেরামের মধ্যেও ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের বিবরণ অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত আবুদ্ দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত,
اِنَّه مَرَّ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلى بَيْتِ عَامِرٍ الْاَنْصَارِىِّ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وَلاَدَتِه عَلَيْهِ الصَّلوةُ وَالسَّلاَمُ لِاَبْنَائِه وَعَشِيْرَتِه وَيَقُوْلُ هَذَا اَلْيَوْمُ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلوة وَالسَّلاَمُ اَنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْمَةِ وَالْمَلاَئِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَجى نَجَاتَكَ ـ
[
التنوير فى مولد البشير والنذير]
অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর সাথে আমির আনসারীর ঘরে গেলেন। তিনি তখন তার পুত্রদের ও গোত্রীয় লোকদেরকে হুযূর-ই আক্রামের বেলাদত শরীফের বর্ণনাবলী শিক্ষা দিচ্ছিলেন। আর বলছিলেন, ‘আজকের এ দিন।অতঃপর হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম এরশাদ করেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা তোমার জন্য রহমতের দরজাগুলো খুলে দিয়েছেন, ফেরেশতারা সবাই তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করছে। যে ব্যক্তি তোমার মতো কাজ করবে, সে তোমার মতো মুক্তি পাবে।’’
[
সূত্রঃ আত্তানভীর ফী মওলেদিল বশীরিন নাযীর।]
মীলাদুন্নবী উদযাপন প্রসঙ্গে ইমামগণের অভিমতঃ
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী হাসানুল মাক্বসাদ ফী আমলিল মাওলেদ’ (حسن المقصد فى عمل المولد)-এর মধ্যে বর্ণনা করেন-
فَظَهَرَ لِىْ تَخْرِيْجُه عَلى اَصْلٍ اٰخَرَ وَهُوَ مَا اَخْرَجَهُ الْبَيْهَقِىُّ عَنْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ اَنَّ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَّ عَنْ نَفْسِه بَعْدَ النَّبُوَّةَ مَعَ قَدْ وَرَدَ عَنْ جَدِّه عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَقَّ عَنْهُ فِىْ سَابِعِ وِلاَدَتِهِ وَالْعَقِيْقَةُ لاَ تُزَادُ مَرَّةً ثَانِيَةً فَيُحْمَلُ عَلى اَنَّ الَّذِىْ فَعَلَهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِظْهَارُ الشُّكْرِ عَلى اِيْجَادِ اللهِ اِيَّاهُ رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ وَتَشْرِيْعِ لِاُمَّتِه كَمَا كَانَ يُصَلِّىْ عَلى نَفْسِه لِذَالِكَ فَيَسْتَحِبُّ لَنَا اَيْضًا اِظْهَارُ الشَّكْرِ بِمَوْلِدِه بِالْاِجْتِمَاعِ وَاِطْعَامِ اَلطَّعَامِ وَنَحْوِ ذَالِكَ بِوُجُوْهِ الْقُرْبَاتِ وَاِظْهَارِ الْمُسَرَّاتِ
অর্থাৎ আমার নিকট এ হাদীসের বর্ণনার জন্য একটি সনদ প্রকাশ পেয়েছে। তা হচ্ছে ওই হাদীস, যা ইমাম বায়হাক্বী হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজের আক্বীক্বা নিজে করেছেন নুবূয়ত প্রকাশের পর। এতদ্সত্ত্বেও তাঁর দাদা খাজা আবদুল মুত্তালিব থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর বেলাদত শরীফের সপ্তম দিনে তাঁর পক্ষ থেকে আক্বীক্বা করেছেন অথচ আক্বীক্বা একবারের বেশী করা হয় না। সুতরাং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন, তার ব্যাখ্যা এটা দেওয়া হবে যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে পয়দা করেছেন বিধায় সেটার শোকরিয়া প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে তা করেছেন আর তেমন কাজ শরীয়তের বিধিভুক্ত করার জন্য, যেমন তিনি তজ্জন্য নিজে দুরূদ পড়েছেন। সুতরাং আমাদের জন্যও হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এঁর মীলাদ শরীফের শোকরিয়া আদায় করা মুস্তাহাব; তাও মাহফিলের আয়োজন ও খানা খাওয়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও তাঁর নিমাত প্রাপ্তিতে খুশী প্রকাশের নিমিত্তে।)
পাক ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব মা-সাবাতা বিস্সুন্নাহ্’ (ما ثبت بالسنة)-এর মধ্যে এভাবে বর্ণনা করেন-
لاَيَزَالُ اَهْلُ الْاِسْلاَمِ يَحْتَفِلُوْنَ بِشَهْرِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَعْمَلُوْنَ اْلَولَائِمَ وَيَتَصَدَّقُوْنَ فِىْ لَيَالِيْهِ بِاَنْوَاعِ الصَّدَقَاتِ وَيَظْهِرُوْنَ السُّرُوْرَ فِى الْمَبَرَّاتِ وَيَعْتَنُوْنَ بِقِرَأَءِ مَوْلِدِهِ الْكَرِيْمِ (مَاثَبَتَ بِالسُّنَّةِ)
অর্থাৎ মুসলমানগণ মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাসে মাহফিল করে আসছেন, খাবারের আয়োজন করেন, সেটার রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সাদক্বাহ্-খায়রাত করেন এবং খুশী প্রকাশ করেন দান-খায়রাত ও মীলাদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে।
এভাবে মিশরও সিরিয়ার মধ্যে মীলাদ পালন প্রসঙ্গে فاكثر هم بذالك عناية اهل مصروالشام অর্থাৎ সুতরাং মিশর ও সিরিয়াবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তা পালন করে থাকে।
দেওবন্দীদের অন্যতম মৌলভী আশরাফ আলী থানভী কর্তৃক রচিত মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামনামক কিতাবের ১৯২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন, ‘ক্বোরআনের আয়াত- ذَكِّرْهُمْ بِاَيَّامِ اللهِ (তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন আল্লাহর দিনগুলোকে)’-এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেন, ‘‘এ কথা সুস্পষ্ট হল যে, নবী পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বেলাদত উপলক্ষে খুশি-আনন্দ করা বৈধ। শুধু তা নয়, বরং তা বরকত হাসিলেরও বড় উপায়।
রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর ওস্তাদ মীলাদ সম্পর্কে বলেন, এ কথা হক ও সত্য যে, হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পালন এবং ঈসালে সাওয়াবের আয়োজন করা মানবের পরিপূর্ণ কল্যাণের একটি সোপান। বাস্তব এ যে, হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মীলাদ পালন করার মধ্যে এবং ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে ফাতেহা পড়া আপন মীলাদের খুশি উদ্যাপন করেছেন পুরোটাই মানবের জন্য মঙ্গল।
[
সূত্রঃ শেফাউল সায়ের, কৃত. শাহ্ আবদুল গণী দেহলভী।]
উপরোক্ত দলীলাদির আলোকে সাব্যস্ত হল যে, ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালন করা এ উম্মতের জন্য সর্বোত্তম ইবাদত; যার মাধ্যমে আল্লাহর মহান নিমাতের শোকর আদায় হয়। আর নিমাতের শোকর আদায়ের জন্য স্বয়ং আল্লাহরই হুকুম বিদ্যমান। যেমন, আল্লাহ্ তাআলা এরশাদ করেন, وَاشْكُرُوْا لِىْ وَلاَتَكْفُرُوْنَ অর্থাৎ ‘‘তোমরা আমার নিমাতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নাফরমানী করো না।’’ 
সুতরাং যারা আল্লাহর মহান নিমাতের শোকর আদায়ার্থে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালন করে, তারা আল্লাহর হুকুমই বাস্তবায়ন করে। আর আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন ও পালন তারাই করবে, যারা ঈমানদার। তাই ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালন করা ঈমানদারের কাজ ও পুণ্যময় আমল, যা করলে পুণ্য বা সাওয়াব পাওয়া যায়। আর যারা ঈমানদার নয়, তারা ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালন করার প্রশ্নই আসে না। অবশ্য যারা ঈমানদার নয়, তারা যদি ভক্তি সহকারে তা পালন করে, তবে তারা অবশ্যই সুফল পাবে। যেমন, হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা আবূ লাহাবকে হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু স্বপ্নে দেখলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার অবস্থা কি? সে উত্তরে বললো, ‘‘ঈমান ছাড়া মৃত্যুবরণের কারণে বর্তমানে আমার অবস্থান জাহান্নামে, কিন্তু প্রতি সোমবার রাতে আমার আযাব হালকা হয়ে যায় এবং আমি আমার এ দুআঙ্গুল থেকে ঠান্ডা পানি পান করতে থাকি। আর এ আযাব হালকা হওয়া এবং ঠান্ডা পানি পাবার কারণ হলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের বেলাদত শরীফের শুভ সংবাদ দিয়ে আমার দাসী সুয়াইবা আমাকে অবহিত করলে আমি তাকে আনন্দ চিত্তে এ দুআঙ্গুলে ঈশারা করে মুক্ত করে দিয়েছিলাম এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দুধ পান করানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। এ প্রসঙ্গে ইমাম শামসুদ্দীন যাযাবী (জন্ম ৬৬০ হি.) তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব উরফুত তারীফ বিল মাওলিদিশ শরীফ’-এর মধ্যে এ মন্তব্য করেন-
فَاِذَا كَانَ اَبُوْ لَهَبٍ نِالْكَافِرُ الَّذِىْ نَزَلَ الْقُرْانُ لِذَمِّه جُوْزِىَ فِى النَّارِ بِفَرْحَةِ لَيْلَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِه فَمَا حَالُ الْمُسْلِمِ الْمُوَحِّدِ مِنْ اُمَّةِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسُرُّ لِمَوْلِدِه وَيَبْذُلُ مَا تَصِلُ اِلَيْهِ قُدْرَتُه فِيْ مَحَبَّتِه لَعَمْرِىْ اِنَّمَا يَكُوْنُ جَزَائُه مِنَ اللهِ اَلْكَرِيْمِ اَنْ يُدْخِلَه بِفَضْلِه جَنَّاتِ النَّعِيْمِ (عُرْفُ التَّعْرِيْفِ بِالْمَوْلِدِ الشَّرِيْفِ لِلْجَزَرِىّ وَحَسَنِ اَلْمَقْصِدِ فِىْ عَمَلِ الْمَوْلِدِ لِلسُّيُوْطِىِّ)
অর্থাৎ আবূ লাহাব, যার মৃত্যু কুফরী অবস্থায় হয়েছে এবং যার দুর্নামের জন্য সূরা লাহাব ক্বোরআনে নাযিল হয়েছে, সে মৃত্যুর পর জাহান্নামের আগুনের মধ্যে রয়েছে; কিন্তু হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামর মীলাদে পাকের রজনীতে (৫৭০ খ্রি.) হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামর শুভাগমনের উপর খুশি উদ্যাপন করার কারণে প্রতি সোমবার আযাব থেকে মুক্তি এবং ঠান্ডা পানি পান করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। আর এ উম্মতের ঈমানদারের অবস্থা কিরূপ হবে, যে হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামর মীলাদের উপর খুশি উদ্যাপন করে এবং নবী প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার সার্মথ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে? আমার জীবনের শপথ! অবশ্যই এটার প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ্ তাআলা তাকে জান্নাতুন্ নাঈমে প্রবেশ করাবেন।
[
সূত্রঃ উরফুত্ তারীফ বিল মাওলিদিশ্ শরীফ, কৃত. শামসুদ্দীন জাযরী
এবং হাসানুল মাক্বসাদ, কৃত. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী।]
ক্বোরআন, সুন্নাহ্ ও আইম্ম্যা-ই মুজতাহিদীনের মতামতের ভিত্তিতে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালন করা শুধু বৈধই নয় বরং আল্লাহর নিমাতের শোকর আদায়ার্থে উত্তম ইবাদতও। এ কাজ ইসলামেরই অঙ্গ বিশেষ। সুতরাং এটা ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফেররা উদযাপন করার প্রশ্নই ওঠে না।
যারা একথা বলে, তারা ইসলাম ধর্মে তো নেই, এমনকি অন্য কোন ধর্মে তাদের অবস্থান আছে কি না, তা আমার জানা নেই। মুসলমান হয়ে নবীর উম্মত দাবী করে, নবীর মীলাদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে এ ধরনের মুসলমানের স্থান এ উম্মতের মধ্যে নেই। 
হ্যাঁ, যে জনগোষ্ঠী খারেজী নাম নিয়ে বের হয়ে গিয়েছে, এরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
খারেজী ছাড়া এ ধরনের কথা আর কেউ বলতে পারে না। খারেজী সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমার অভিমত হচ্ছে মাখলুক্বাতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ও নিকৃষ্ট সম্প্রদায় হচ্ছে খারেজী
[
সূত্রঃ সহীহ্ বুখারী।]
বর্তমানে যারা খারেজী দলের অন্তর্ভুক্ত, তারা যে মীলাদ শরীফ উদযাপনের বিপক্ষে উপরোক্ত মন্তব্য করে, ফাত্ওয়া জারী করে, তাদের এমন ফাত্ওয়া শুধু তাদের মতাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। সঠিক ইসলামপন্থী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের জন্য হতে পারে না। 
সুতরাং তাদের খারেজী ধর্মে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম না থাকতে পারে, তাই বলে তা আমাদের সঠিক ইসলামেও নেই এ কথা বলা যাবে না; বরং সঠিক ইসলামে মীলাদুন্নবী আছে, তাদের খারেজী ধর্মে নেই। আর খাজেরী ধর্মের কোন ফাত্ওয়া আমাদের ধর্মে গ্রহণযোগ্য নয়।


প্রাচীন ইতিহাসের পাতায়ঃ মক্কা মুকার্রামায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন।
শুরুতে সেই ঐতিহাসিক পর্যটকের পরিচিতি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি যার সুবাদে আজ এক মহাসত্য, মহা বাস্তব ঘটনা জানতে পেরেছি।
ইবনু জুবাইর 
পুরো নাম আবুল হাসান মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন জুবাইর। ৫৪০ হিজরীতে তাঁর জন্ম। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়াতে। তিনি একাধারে যেমন হাফেজে কোরআন ছিলেন, তেমন ছিলেন আলেমে দ্বীন এবং প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক ও পর্যটক। 
তিনি জীবনে তিনবার বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। সর্বশেষ যখন তিনি ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন, সেটা ছিল তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর ইন্তেকালের পর। ভ্রমণের এক পর্যায়ে তিনি মক্কা মুকাররামায় গিয়ে পৌঁছেছিলেন। 
ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনু জুবাইর তাঁর ভ্রমণকালের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লিখে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর কোন এক ছাত্র সেগুলো সংকলণ করে প্রকাশ করেছিলেন যা পরবর্তীতে রিহলাহনামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
'রিহলাহ' ইবন জুবাইরঃ 
ঐতিহাসিক ইবনু জুবাইর যখন মক্কা মুকাররামাতে পৌঁছেন, তখন সেখানে তিনি কী কী দেখেছিলেন, কী অভিজ্ঞতা হাসিল করেছিলেন, 
তা নীচে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ইনশা আল্লাহ।
রিহলাহ, পেইজ নং ৯১। 
তিনি লিখেছেন,
মক্কা (মুকাররামাহ)। আল্লাহ তাঁকে মর্যাদাবান করেছেন। পুরোটাই মহান দর্শনীয় স্থান । 
(
এরপর তিনি কাবা ঘরের কথা উল্লেখ করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেড়ে উঠার স্থানের কথা এবং ওহী নাযিল সহ অন্যান্য কথা বলেছেন।)
এরপর তিনি লিখেন, 
এঁর (মক্কা মুকাররামার) আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো, কুব্বাতুল ওহী বা ওহীর গম্বুজ। এটি উম্মুল মুমিনীন খাদীজাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে অবস্থিত। ঐ ঘরে আরেকটি ছোট্ট গম্বুজ রয়েছে যেখানে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্ম হয়েছিল। এখানেই আবার জান্নাতের যুবকদের দুই সায়্যিদ (সর্দার) ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার জন্ম হয়েছিল।
এরপর তিনি লিখেন,
তন্মধ্যে আরেকটি স্থান হচ্ছে সেটি যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম (ওয়েলাদত শরীফ) হয়েছিল। এবং সেই পবিত্র মাটি যা সর্বপ্রথম তাঁর পবিত্র জিসিম মুবারককে স্পর্শ লাগিয়েছিল। সেখানে একটি মসজিদ ও নির্মিত হয়েছিল। এবং সেই পবিত্র স্থান যেখানে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়েলাদত মুবারকের সময় তাশরীফ রেখেছিলেন যাকে আল্লাহ তাআলা সমগ্র উম্মতের জন্য রহমত হিসেবে কবুল করেছেন। ঐ স্থানটি রৌপ্য দ্বারা বেষ্টিত।
এরপর ইবনু জুবাইর লিখেন, 
(
পেইজ ৯২।) 
এ বরকতময় স্থানটি ওপেন করে দেয়া হয় রবীউল আউয়াল মাসে এবং সোমবার দিনে আর সমগ্র মুসলমান তখন সেখানে বরকত লাভের আশায় প্রবেশ করেন।
_____________ 
আমরা দেখলাম, 
৭০০ বছরের পুরোনো ইসলামের ইতিহাস। মুসলমানের ঐতিহ্যের ইতিহাস। নবীপ্রেমের ইতিহাস। মীলাদুন্নবীর ইতিহাস। 
হয়তো বা কোন একদিন আবার আসবে সেই ঐতিহ্য ।
মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে মক্কা মুকাররামাতে ঘোষিত হবে বিশেষ কর্মসূচী। 
অসম্ভব নয়।
শুধু প্রতীক্ষার প্রহর।




1 comment:

  1. ওয়াজীহিয়া মোহাম্মদিয়া ত্বরীক্বাহর পক্ষ থেকে তোমাকে ও তোমাদের সকলকে লাল গোলাফ অভিনন্দন

    ReplyDelete