News: MAHFIL ROUTINE: 1. Yearly Mahfil a. Eid E Miladunnabi (Sallallahu Alaihi Wa Sallam)11Rabiul Aeull b. Eid E Miladul Wajeeh (Radhiallahu Anhu) 11jilkad 2. Monthly Mahfil a.The Holy Ashura b. The Akheri Chahar Somba c. Mi’rajunnabi (Sallahu Alaihi Wa Sallam)Night d. Lailatul Barat e. Lailatul Qadr f. 18th ramadan- Iftar Mahfil (Darbar’s) g. 18th Ramadan- Iftar Mahfil (RANI MA’s) h. 29th Zilhajj- (night) Khandakar Qari Mohammad AbulHashem (radhiallahu Anhu)’s Isal ESawab Mahfil i. 11th Rabius Sani (night)Fateha E Iyazdahm And Umme Hani (RANI MA) (RadiallahuAnha)’s Isal E Sawab Mahfil 3.Weekly Mahfil Every Thursday after ‘Isha- Zikr, Milad And Qiyam Mahfil Other Mahfils a. Salatul Jum’a b. Eid ul Fitr c. Eid ul Azha d. Afarafa Day Mahfils For Bangladesh Affairs Routine: a. Independence Day of Bangladesh, 26th March b. Victory Day of Bangladesh, 16th December c. International Mother Language Day and National Shaheed Day, 21th February d. Death Anniversary of Shahid President Ziaur Rahman, 30th May d. National Mourning Day and Death Anniversary of Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, 15th August

Tuesday, October 17, 2017

মহাকবি শেখ সাদী
প্রকৃত নাম শরফুদ্দীন। ডাক নাম মসলেহউদ্দীন। আর উপাধি বা খেতাব হচ্ছে সাদী। আসল নাম নয়, তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে আছেন উপধি সাদীনিয়ে। মানে শেখ সাদী নামে। জানা যায় কবির আব্বা তৎকালীন শিরাজের বাদশাহ আতাবক সাদ বেন জঙ্গীর সেক্রেটারী ছিলেন। কবি নিজে তুকলাবীন সাদ জঙ্গীর রাজত্বকালে কবিতা লিখতেন, এ কারণেই তিনি তার নামের সঙ্গে সাদী উপাধি যোগ করেন এবং পরবর্তীকালে শেখ সাদী নামেই পরিচিত হয়ে হন।
   শেখ সাদীর জন্মসনের ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ আছে। তবুও মোটামুটি বলা যায় তিনি ৫৮০ হিজরী মোতাবেক ১১৮৪ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যু তারিখ সবার মতে৬৯১ হিজরী মোতাবেক ১২৯২ খৃস্টাব্দ।
পরহেজগার পিতার সাহচর্যেই শেখ সাদী শিশুকাল অতিক্রম করেন। পিতার দেখাদেখি সাদীও নামায, রোযা ও রাত্রিকালীন ইবাদতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। পিতার উৎসাহে কুরআন অধ্যয়নে তিনি যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। বলা যায় দরবেশ পিতার আদর্শেই আদর্শবান হয়ে গড়ে ওঠেন শেখ সাদী।
বাল্যকালেই সাদীর পিতা ইন্তিকাল করেন। পিতার ইন্তিকালের পর সাদী পুণ্যবতী ও গুণবতী মায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠতে থাকেন। এ সময়ে তিনি একজন পন্ডিত ব্যক্তির স্নেহধন্য হন। তিনি হলেন তাঁরই শ্রদ্ধাভাজন মামা আল্লামা কুতুবুদ্দীন শিরাজী। যিনি কিনা হালাকু খাঁর অন্যতম দরবারী বন্ধু ছিলেন।
তাঁর বাল্যকাল সম্বন্ধে ঐতিহাসিক সূত্রে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তবে তাঁর নিজের লেখা হতে চমকপ্রদ কিছু ঘটনা পাওয়া যায়। যেমন-তিনি যখন নিতান্ত ছোট তখন তাঁর আব্বা লেখার জন্য তাঁকে একটি তখতিও হাতের আঙ্গুলে পরার জন্য একটি সোনার আঙটি কিনে দেন্। কিন্তু এক মিষ্টি বিক্রেতা কবিকে মিষ্টি দিয়ে ভুলিয়ে আংটি নিয়ে চম্পট দেয়। আংটি খোয়া গেলেও একথা বুঝতে কষ্ট হয় না যে কবি মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন।
একবার ঈদের দিন ঈদের ভিড়ে শেখ সাদী পিতার জামার প্রান্ত ধরে হাঁটছিলেন, যেন পিতা হতে তিনি আলাদা না হয়ে যান। কিন্তু পথে খেলাধুলায় মত্ত ছেলেদের দেখে জামার প্রান্ত ছেড়ে তিনি তাদের দলে ভিড়ে যান। পরবর্তীতে শেখ সাদীর আব্বা যখন তাঁকে ফিরে পান তখন রেগে গিয়ে বলেন, “গাধা! তোকে না বলেছিলাম কাপড় ছাড়িস না।
জানা যায়, একবার তিনি তাঁর আব্বার সাথে সারারাত ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দিলেন। এ সময় ঘরের অন্যান্যরা ঘুমে অচেতন ছিল। এ অবস্থা দেখে সাদী তাঁর আব্বাকে বললেন, ‘দেখছেন, এসব লোক কেমন সংজ্ঞাহীন হয়ে ঘুমাচ্ছে। কারো এতটুকুও সৌভাগ্য হচ্ছেনা যে, উঠে দুরাকাত নামায পড়ে।এ কথার উত্তরে সাদীর পিতা বললেন, ‘তুমি যদি শুয়ে থাকতে তবেই ভাল হতো; তাহলে পরচর্চা হতে বিরত থাকতে।
শেখ সাদীর প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর মহান পিতার নিকট হয়েছিল। অল্প বয়সেই তিনি পিতৃহীন হন। এ সময়ে তিনি শিরাজের প্রখ্যাত আলেম উলামাদের সংস্পর্শে আসেন এবং জ্ঞান আহরণ করতেন।
প্রথম দিকে তিনি শিরাজের সুলতান গছদদৌলা প্রতিষ্ঠিত গছদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি আরো কয়েকটি মাদ্রাসায় পাঠ গ্রহণ করেন। এ সময়ে দেশের শাসক আতাবক জঙ্গী দেশ জয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে দেশ গঠনে উদাসীন ছিলেন। ফলে দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশে সেখানে শিক্ষার কোন পরিবেশ ছিল না বললেই চলে। এমতাবস্থায় শেখ সাদী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মানসে বাগদাদ গমন করেন এবং সেখানকার বিখ্যাত মাদরাসা নিযামিয়ায় ভর্তি হন। এ মাদ্রাসার যাত্রকাল হতে মুতুওল্লী ছিলেন শিরাজের স্বনামখ্যাত আলেম শেখ আবু ইসহাক শিরাজী। শেখ সাদী অল্পকালের মধ্যে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন এবং বৃত্তি লাভ করেন।
মাদ্রাসা নিযামিয়ায় অধ্যয়নকালে তিনি হাদীস শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য তৎকালীন সময়ের বিশ্ববিখ্যাত আলেম আল্লামা আবুল ফরজ আবদুর রহমান ইবনে জৌজীর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেন। এ ব্যক্তি ছিলেন তাফসীর ও হাদীসশাস্ত্রে তখনকার ইমাম। ইবনে জৌজীর আরবী ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন। শেখ সাদী আল্লামা শাহবুদ্দীন সুহরাবদীর সাহচর্য লাভ করেছিলেন।
শিশুকাল হতে যদিও শেখ সাদী ফকিরী ও দরবেশী জীবন বেশি পছন্দ করতেন তবুও তিনি জ্ঞান অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এ সম্বন্ধে তিনি নিজে বলেছেন, ‘দরবেশ শুধু নিজকে বাঁচানোর চেষ্টায়ই থাকে। অপরপক্ষে আলেমদের চেষ্টা থাকে নিজের সাথে অন্য ডুবন্ত লোকদের বাঁচিয়ে তোলার।
শেখ সাদী বাগদাদের লেখাপড়া শেষ করে দেশভ্রমণে বের হন। তিনি এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো দীর্ঘ সময় ব্যয় করে ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর দীর্ঘ জীবনকে এভাবে ভাগ করে নিয়েছিলেন-
ত্রিশ বছর লেখাপড়ায়
ত্রিশ বছর দেশভ্রমণে
ত্রিশ বছর গ্রন্থ রচনায়
ত্রিশ বছর আধ্যাত্মিক চিন্তায়।
 শোনা যায় তাঁর জীবনের উক্ত চারটি পর্যায় যেদিন পূর্ণ হয় সেদিনই নাকি তিনি ইন্তিকাল করেন। শেখ সাদী দেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে এমন পান্ডিত্য অর্জন করেন যে তিনি আঠারটি ভাষা রপ্ত করতে সক্ষম হন। এর ভেতর অনেকগুলি ভাষা তার মাতৃভাষার মতই ছিল। আর তিনি এত অধিক দেশ ভ্রমণ করেন যে ইবনে বতুতা ছাড়া প্রাচ্য দেশীয় পর্যটকদের মধ্যে কেউই এত অধিক দেশ ভ্রমণ করেন নি। আশ্চর্যের বিষয় যে, তিনি পায়ে হেঁটে চৌদ্দবার হজ্জ্ব পালন করেছিলেন। তিনি তার সফরকালে অসংখ্য নদী এমনকি পারস্যোপসাগর, ভারত মহাসাগর, ওমান সাগর, আরব সাগর প্রভৃতি পাড়ি জমিয়েছেন। আর সঞ্চয় করেছেন জ্ঞানের রাজ্যে অসংখ্য মনি মুক্তা, হিরা-জহরত।
দেশ ভ্রমণকালে শেখ সাদী এক সময়ে কোন কারণে দামেশকবাসীর প্রতি বিরাগভাজন হয়ে ফিলিস্তিনের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। কিন্তু এ সময়ে তিনি দুর্ভাগ্যক্রমে তখনকার খৃস্টানদের হাতে বন্দী হন। খৃস্টানগণ বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরী হতে আনীত ইহুদী বন্দীদের সাথে কবিকে খন্দক খননের কাজে নিয়োজিত করে। একদিন সৌভাগ্যক্রতে তাঁর পিতার এক বন্ধু তাঁকে এ অবস্থায় দেখতে পান। তিনি দশ দিরহাম মুক্তিপণ দিয়ে তাঁকে মুক্ত করে আনেন এবং একশত আশরাফী দেনমোহর ধার্য করে নিজ কন্যার সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু সাদীর এ স্ত্রী অতন্ত বাচাল ছিলেন বলে এই বিয়ে বেশিদিন টিকে নি। তিনি একদিন সাদীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘তুমি কি পূর্ব জীবনের কথা ভুলে গেছ? তুমিতো সেই ব্যক্তি যাকে আমার পিতা দশটি রোপ্য দিনার দিয়ে মুক্ত করেছেন।উত্তরে কবি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তিনি দশ দিনারে মুক্ত করে একশত আশরাফী দিয়ে পুনরায় বন্দী করেছেন।
ভারত ভ্রমণকালের একটা ঘটনা তাঁর বুসতাঁ কাব্যগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি হল সোমনাথ মন্দিরের। কবির মুখেই শুনি সেই ঘটনা, “আমি সোমনাথ এসে যখন দেখতে পেলাম হাজার হাজার লোক এসে মূতির নিকট নিজ নিজ মনস্কামনা হাসিলের জন্য পূজা দিচ্ছে তখন আমি বিস্মিত হলাম। হাজার হাজার জীবিত লোক এক প্রাণহীন মূর্তির নিকট মনষ্কামনা সিদ্ধির প্রার্থনা জানাচ্ছে।
একদিন আমি এক ব্রাহ্মণের নিকট যেয়ে এর রহস্য জানতে চাইলাম। ব্রাহ্মণ আমার কথা শুনে মন্দিরের পূজারীদের ডেকে আনলো-তারা এসে ক্রোধ ভরে আমাকে চারিদিক হতে ঘিরে ফেললো, আমি তখন সমূহ বিপদ দেখে বললাম, তোমাদের দেবতার অপমান করা আমার উদ্দেশ্য নয়…….তবে আমি এখানে নতুন এসেছি, এ মহান দেবতার পূজাদি কিভাবে দিতে হবে জানি না বলে জানতে চেয়েছি। আমাকে তা শিখিয়ে দাও যেন ঠিক পূজা করতে পারি।
তখন পূজারিগণ খুশি হয়ে আমাকে পূজার ধরন ধারণ শিখিয়ে দিয়ে মন্দিরে নিয়ে গেল। তারা আরও বলল, আজ রাতে তুমি মন্দিরে থাক তখন এ দেবতার শক্তি দেখতে পাবে।
আমি সারারাত মন্দিরে কাটালাম। ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে অসংখ্য স্ত্রী পুরুষ মন্দিরে ঢুকে পড়ল। তখন মূর্তি একখানা হাত উঠিয়ে পূজারীদের আশীর্বাদ করল। তখন সকলেই জয় জয় করে উঠল। এরপর নিশ্চিন্ত মনে সকলে চলে গেল। ঐ ব্রাহ্মণ আমাকে হেসে বলল, কি বল, এখন বিশ্বাস হল তো!
আমি বাহ্যিকভাবে কেঁদে কেঁদে আপন মূর্খতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলাম। তখন ব্রাহ্মণগণ আমার প্রতি সদয় হয়ে মূর্তির নিকট নিয়ে গেলে আমি তার হাত চুম্বন করে সম্মান জানালাম। এরপর যেন সত্যিকার ব্রাহ্মণ হয়ে আমি নিশ্চিন্তে মন্দিরে আসা যাওয়া করতে লাগলাম।
আর এক রাত্রে সকলে চলে গেলে, আমি মন্দিরের দরজা বন্ধ করে মূর্তির নিকট গিয়ে এর ভেদ জানতে চাইলাম। আমার চোখে পড়ল মূর্তির পিছনে একখানি পর্দার আড়ালে রশি ধরে একজন পূজারী বসে আছে। রশির একদিক মূর্তির সাথে বাঁধা। সে পূজারী যখন রশি ধরে টানে তখনই মূর্তির হাত উপরে উঠে যায় আর সাধারণ লোক তাকেই মূর্তির শক্তি বলে নাচতে থাকে।
সে পূজারী পর্দার আড়াল হতে যখন দেখতে পেল আমি তাদের গোপন রহস্য জেনে ফেলেছি তখন সে দৌড়ে পালিয়ে যেতে লাগল। আমি তখন প্রাণের ভয়ে তাকে ধরে এক কূপে ফেলে দিলাম।
এরপর সে রাতেই সোমনাথ ছাড়লাম। ভারতের পথে ইমনের সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে হেযাজে এসে পৌছলাম।
 শেখ সাদী হলেন বিশ্ববিখ্যাত কজন কবির মধ্যে অন্যতম। তাঁর রচিত গুঁলিস্তা ও বুঁসতা বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। অনেকে মনে করেন, এই গ্রন্থ দুটি অধ্যয়ন ব্যতীত ফারসী সাহিত্য অধ্যয়ন অপূর্ণ থেকে যায়। এ গ্রন্থ দুটি একত্রে সাদী নামাহনামে পরিচিত। নৈতিকতা বিষয়ক কাব্যগ্রন্থ হল বুঁসতা। আর নৈতিকতা বিষয়ক গদ্যগ্রন্থ হল গুঁলিস্তা। গুলিস্তাঁয় লেখক অত্যন্ত সহজ সরল হৃদয়গ্রাহী ভাষায় নৈতিকতার বিষয় আশয় গল্পোচ্ছলে পরিবেশন করেছেন। এর ভেতর অবশ্য কবিতাও আছে। এমন কি কুরআন হাদীসের উদ্ধৃতিও লেখক ব্যবহার করেছেন নিজের বক্তব্যকে সুন্দর ও জোরালো করার জন্য।
সাদী ছিলেন অসাধারণ কাব্য প্রতিভার অধিকারী। এ ব্যাপারে মাওলানা আবদুর রহমান জামী বলেছেন, ‘রুমীর মসনবী, আনোয়ারীর কাসিদা এবং সাদীর গযল সমপর্যায়ের।তিনি আরো মনে করতেন যে, শেখ সাদী বিশ্ব বিখ্যাত লেখক আমীর খসরুর চেয়েও বড় লেখক। অবশ্য আমীর খসরু নিজেও তার সেপাহর মসনবীগ্রন্থে শেখ সাদীকে গযলের উস্তাদ হিসেবে স্বীকার করেছেন।
শেখ সাদীর কাব্য প্রতিভা সম্পর্কে চমৎকার একটা গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটি হল-শিরাজের এক ব্যক্তি সাদীর কাব্য প্রতিভা সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। এক রাতে ঐ ব্যক্তি স্বপ্নে দেখতে পেলেন, েএকজন ফেরেশতা একখানি নূরের বরতন নিয়ে মাটিতে নেমে এলেন। ঐ ব্যক্তি জানতে চাইলেন এ কি ব্যাপার? ফেরেশতা জবাবে বললেন, সাদীর একটি কবিতা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে-সে জন্য বেহেশতের এ উপহার। কবিতাটি হল-
 জ্ঞানিদের চোখে
 গাছের ঐ সবুজ পাতা
 খোদা তত্ত্বের
 এক একখানি গ্রন্থ।
 ঐ ব্যক্তির যখন ঘুম ভেঙ্গে গেল তখন সেই রাতেই সাদীর গযলটির ব্যাপারে স্বপ্নে দেখা খোশ খবর জানতে গেলেন। আশ্চর্য! লোকটি দেখেন উজ্জ্বল বাতি জ্বেলে শেখ সাদী সেই কবিতাটিই পড়ছেন।
আরো একটি ঘটনা, শেখ সাদী তখন দেশ বিদেশে বেশ মশহুর হয়ে পড়েছেন। একদিন শিরাজ হতে ষোল শ মাইল দূরের কাশগড়ে বেড়াতে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন ছোট বড় সবাই তাঁর নাম জানে ও তাঁর কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ।
সাদী উঠেছিলেন কাশগড়ের জামে মসজিদে। সেখানে একজন ছাত্র আল্লামা যমখশীর একটি গ্রন্থ হাতে নিয়ে বলেছিল, ‘কোরবে যায়েদ মির
ছাত্রটির কথা শুনে শেখ সাদী বললেন, ‘খাওয়ারযমের ও তাঁর শত্রুর মাঝে সন্ধি হয়ে গেছে তবে যায়েদ ও মীরের ঝগড়া এখনো চলছে।ছাত্রটি একথা শুনে সাদীকে বললো, জনাবের দেশ কোথায়?
শিরাজ
তবে তো সাদীকে চিনেন। তাঁর দু/একটি কালাম শুনাবেন কি?
আরবীতে কিছু কালাম বললেন সাদী।
যদি দুএকটি ফারসী কালাম শুনাতেন। ছাত্রটি বলল।
একটি ফরাসী বয়াত পেশ করলেন সাদী।
পরে যখন ছাত্রটি জানলো ইনিই সেই মহাকবি শেখ সাদী। তখন সে করজোড়ে কবির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলল, কাশগড়ে যদি কিছুকাল অবস্থান করেন তো খেদমত করতে পারতাম।
কিন্তু সাদী কাশগড়ে আর থাকতে পারেন নি। তিনি সেখান হতে তিবরীজ চলে যান।
অনেক ইংরেজ লেখক শেখ সাদীকে প্রাচ্যের শেক্সপীয়র বলে আখ্যায়িত করেছেন।
শেখ সাদীর বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল-
১. গুলিসতাঁ ২. বুস্তুাঁ ৩. করিমা ৪. সাহাবিয়া ৫. কাসায়েদে ফারসী ৬. কাসায়েদে আরাবীয়া ৭. গযলিয়াত ৮. কুল্লিয়াত ইত্যাদি।
বুস্তাঁ ও গুলিসতাঁ গ্রন্থ দুটি এশিয়ায় সব থেকে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গ্রন্থ দুটির অনেক কথায় পারশ্য সাহিত্যে প্রবাদে পরিণত হয়েছে।
পন্ডিতদের মতে গদ্য ও পদ্য মিলিয়ে ফারসি ভাষায় ৪ খানি গ্রন্থ শ্রেষ্ঠ। তা হল-
     মহাকবি ফেরদাউসী——-শাহনামা
     জালালুদ্দীন রুমি——- মসনবী
     শামসুদ্দীন হাফেযে——- দিওয়ান
  এবং শেখ সাদীর————-গুলিস্তাঁ
গুলিসতাঁ উপদেশমূলক চমৎকার সব গল্পে ভরপুর। যেমন-এক বাদশাহ এক অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দেন। লোকটি বহু কাকুতি মিনতি করেও যখন কিছু হল না তখন বাদশাহকে গালি দিয়ে বসল। বাদশাহ তার কথা বুঝতে না পেরে উজিরের নিকট জানতে চাইলেন সে কি বলেছে।
সেই উজির ছিলেন নেক মেযাজের, তাই তিনি লোকটির উপকারার্থে বললেনঃ হুযুর লোকটি বলছে-যিনি রাগ দমন করে অপরাধ করেন, তিনি খোদার বন্ধু। একথা শুনে বাদশাহ খুশি হয়ে লোকটিকে ছেড়ে দেয়ার আদেশ দিলেন। অন্য একজন হিংসুক স্বভাবের উজির ছিলেন। তিনি বাধা দিয়ে বললেন, হুযুর এ মিথ্যা কথা। লোকটি আপনাকে মন্দ বলেছে।
তা শুনে বাদশাহ বললেন, তোমার কথা সত্য হলেও অন্য উজিরের মিথ্যার চেয়ে নিকৃষ্ট। কারণ তাতে ছিল পরোপকারের উদ্দেশ্য-আর তোমার কথায় অনিষ্ঠের অভিসন্ধি।বাদশাহ লোকটিকে ক্ষমাই করেছিলেন।
এমনি সব গল্প দিয়ে ভরা রয়েছে গুলিসতাঁ যার তুলনা বিশ্ব সাহিত্যে দ্বিতীয়টি নেই। শেখ সাদী দৈহিকভাবে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ছিলেন। কষ্টসহিষ্ঞু এ মানুষটি প্রচন্ড উদারও ছিলেন। তিনি পায়ে হেঁটে দেশের পর দেশ ভ্রমণ করেছেন। পাহাড়, পর্বত, মরুভূমি, নদী-নালা সবই তাঁর পায়ের তলায় হার মেনেছে। এমনকি তিনি ফকির দরবেশের ন্যায় এসব পথ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খালি পায়ে পাড়ি জমিয়েছেন।
এ ধরনের ভ্রমণে যে নানা ধরনের দুঃখ কষ্ট আসে তা ভুক্তভোগীরা জানেন। শেখ সাদীর জীবনেও নানা বিপদ আপদ এসেছ এবং তিনি তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু একবার তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেন নি। এ ব্যাপারে গুলিস্তাঁ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কখনো কালের কঠোরতা ও আকাশের নির্মমতার ব্যাপারে অভিযোগ করিনি। তবে একবার আমি ধৈর্য্ ধরে রাখতে পারিনি। আমার পায়ে জুতা ছিলনা এবং জুতা কিনার মত অর্থও ছিল না। তখন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে কুফার মসজিদে গিয়ে উঠলাম। তথায় গিয়ে দেখি একটি লোক শুয়ে আছে যার একখানি পা-ই নেই। তখন খোদাকে শোকর জানিয়ে নিজের খালি পা থাকাও গনিমত মনে করলাম।
শেখ সাদী তাঁর দীর্ঘ জীবনে অসংখ্য বিচিত্র সব ঘটনা দেখেছেন। তিনি দেখেছেন-বিভিন্ন রাজবংশের উত্থান পতন। তিনি উজিরের ছেলেকে ভিক্ষা করতে দেখেছেন। আবার ভিক্ষুককে দেখেছেন উজির বনে যেতে। তিনি এও দেখেছেন মুসলিম সাম্রাজ্যের শৌর্য্ বীর্য্, সাথে সাথে পতনের দৃশ্য। তাঁরই সামনে তাতারদের হাতে সাত লক্ষ মুসলমান খুন হয়েছে। খোরাসানের চারটি শহর, বলখ, মরদ, হেরাত এবং নিশাপুর ধ্বংস হতে দেখেছেন।
শেখ সাদী বড় বড় দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছেন। এ সময়ে তিনি দেখেছেন ক্ষুধার তাড়নায় কিভাবে মানুষ মারা যায়। তিনি নিজেই আরবী একটি মর্সিয়ায় বলেছেন-
আব্বাসীয় খেলাফতের ধ্বংসের পর
যে সমাধান হয়েছে
খোদা তার সহায় হোক।
কেননা
যায়েদের বিপদ
উমরের চোখ খুলবে।
এই মহান মনীষী কবিকুল শিরোমণি শেখ সাদী ৬৯১ হিজরী মোতাবেক ১২৯২ খৃস্টাব্দে আতাবকানের বংশের রাজত্বের শেষ সময়ে শিরাজ নগরীতে ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল একশত কুড়ি বৎসর। শিরাজ নগরীর দিলকুশার এক মাইল পূর্ববর্তী পাহাড়ের পাদদেশে কবিকে সমাহিত করা হয়।

No comments:

Post a Comment