Wednesday, September 16, 2020
পৃথিবী নিয়ে কোরআনের বিস্ময়কর পাঁচ তথ্য
পবিত্র কোরআন সত্যিই একগুচ্ছ বিস্ময়ের সমষ্টি। অক্ষর থেকে শব্দ, শব্দ থেকে বাক্য অজানা সব জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মুক্ত বিশ্বকোষ। তেমনি যে গ্রহে বসবাস করি, অর্থাৎ পৃথিবী এ সম্পর্কেও কোরআনে রয়েছে বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার। মহান আল্লাহ বলেন, (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২০) وَفِي الْأَرْضِ آَيَاتٌ لِلْمُوقِنِينَ বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঁচটি বিস্ময়কর তথ্য এখানে উল্লেখ করা হলো—
মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সূচনা
খুব বেশি দিনের কথা নয় যে মানুষ জানতে পেরেছে মহাবিশ্বের সূচনা এক মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ থেকে ফ্রিদমান সমীকরণ। তার পর বিশ্বতত্ত্ব নীতি এবং হোবল নীতি। সর্বশেষ ১৯৬০ সালে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিজ্ঞান যখন ক্লান্ত, তখন দেখা গেল আজ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ বছর আগেই বিশ্বস্রষ্টা তাঁর মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩০) أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلا يُؤْمِنُونَ
‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে সপ্তাকাশ ও পৃথিবী পুঞ্জীভূত হয়ে ছিল। অতঃপর আমি উভয়টি এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সূচনা করেছি।’
পৃথিবীর সৃষ্টি মহাকাশ সৃষ্টির আগে
মহাকাশ নাকি পৃথিবী? আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র, নাকি পৃথিবীর গাছপালা, কোনটি আগে সৃষ্টি হয়েছে? উত্তর খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না। আপনার ঘরের পবিত্র কোরআন খণ্ডটি হাতে নিন। তাতে চোখ বুলালেই দেখতে পাবেন, ‘আপনি বলুন, সত্যিই কি তোমরা সেই মহাপ্রভুকে অস্বীকার করছ! যিনি পৃথিবীকে মাত্র দুদিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তার অংশীদার নির্ধারণ করছ? তিনি তো সমস্ত জগতের প্রতিপালক। যিনি পৃথিবীতে তার উপরাংশে পাহাড় স্থাপন করেছেন এবং জমিনের ভিতরাংশ বরকতপূর্ণ করেছেন আর ভূগর্ভে সুষমরূপে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করেছেন মাত্র চার দিনে। সব যাচনাকারীর জন্য সমানভাবে।
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন আর তা ছিল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন।
(সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ৯-১১)
قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَنْدَادًا ذَلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ (9)
وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ (10)
ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ (11)
৯ ) বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু'দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।
১০ ) তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে।
১১ ) অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।
এখানে পর্যায়ক্রমে প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি এরপর ভূগর্ভস্থ বিষয়াবলির আলোচনার পর আসমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পৃথিবীর পরিধি ক্রমে সংকীর্ণ হয়ে আসছে
পদার্থবিজ্ঞানীদের গবেষণামতে পৃথিবী তার সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির এক-চতুর্থাংশ পানি হারিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণামতে পৃথিবীর ভার বা ওজন (৫,৯৭২,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) অর্থাৎ ৫ সেক্সটিলিয়ন ৯৭২ কুইন্টিলিয়ন। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিবছর পৃথিবী তার মোট ওজন থেকে ৫০০ টন ভার হারাচ্ছে। এ ছাড়া অক্সিজেনের ভাগ প্রতিনিয়ত কমে আসাও হালের বিজ্ঞানীদের কাছে স্বীকৃত বিষয়। যা থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে পৃথিবীর পরিধি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে মহান আল্লাহ বলেন,
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪) بَلْ مَتَّعْنَا هَؤُلاءِ وَآَبَاءَهُمْ حَتَّى طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ أَفَلا يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا أَفَهُمُ الْغَالِبُونَ
‘তারা কি দেখে না আমি ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমেই সংকুচিত করে আনছি, এর পরও কি তারাই বিজয়ী!’
পৃথিবী দ্রুতগতিতে ছুটছে!
পবিত্র কোরআনে পৃথিবী স্থির কিংবা সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান কোনোটিই বলা হয়নি। বরং এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে যা এসেছে তার সারকথা হলো, পৃথিবী আপন কক্ষপথে দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটার মতো ঢেউ খেলে ছুটে চলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর চলন প্রকৃতি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমত, পৃথিবীর নিজস্ব ঘূর্ণায়ন যা ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহান আল্লাহ যিনি আসমান জমিন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং দিনকে রাতের ওপর এবং রাতকে দিনের ওপর আচ্ছাদিত করেন।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫) আর এ কথা শিরোধার্য, কোনো বৃত্ত আকৃতির জিনিসকে অনুরূপ অন্য কোনো জিনিস দ্বারা বারবার আচ্ছাদিত করার জন্য, তা ঘূর্ণমান হওয়ার বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর সন্তরণ। বহুকাল যাবৎ মানুষ এ ধারণা পোষণ করে আসছে যে পৃথিবী সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান। তবে খুব সাম্প্রতিক সময়ে মহাকাশ গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর চলার ধরনটাকে ঘূর্ণন শব্দে ব্যাখ্যা করা যথাযথ নয়। বরং পৃথিবীসহ আরো অনেক গ্রহ উপগ্রহ সর্বদা সূর্যকে ঘিরে সাঁতার কাটার মতো ওপর-নিচ ঢেউ তুলে সম্মুখপানে অগ্রসর হচ্ছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর আলোচনা টেনে বলেন, প্রত্যেকেই আপন কক্ষপথে সন্তরণ করছে।
(সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৩৪,৩৯,৪০)
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ (38)
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ (39)
لا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ (40)
৩৮ ) সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আলাহ্র নিয়ন্ত্রণ।
৩৯ ) চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।
৪০ ) সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দির্নে প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।
পৃথিবীর নিচে বিপুল পানির উৎস
টিউবওয়েল চেপে পানি তুলছেন কিংবা পাম্পের সাহায্যে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন ভূগর্ভের এই বিপুল পরিমাণ পানির উৎস কোথায়? তাহলে জেনে নিন, মহান আল্লাহ বলেন,
(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১৮) وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
‘আমি আসমান থেকে পরিমাণমতো পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করে রাখি।’
পৃথিবী নিয়ে কোরআনের বিস্ময়কর পাঁচ তথ্য
পবিত্র কোরআন সত্যিই একগুচ্ছ বিস্ময়ের সমষ্টি। অক্ষর থেকে শব্দ, শব্দ থেকে বাক্য অজানা সব জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মুক্ত বিশ্বকোষ। তেমনি যে গ্রহে বসবাস করি, অর্থাৎ পৃথিবী এ সম্পর্কেও কোরআনে রয়েছে বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার। মহান আল্লাহ বলেন, (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২০) وَفِي الْأَرْضِ آَيَاتٌ لِلْمُوقِنِينَ বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঁচটি বিস্ময়কর তথ্য এখানে উল্লেখ করা হলো—
মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সূচনা
খুব বেশি দিনের কথা নয় যে মানুষ জানতে পেরেছে মহাবিশ্বের সূচনা এক মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ থেকে ফ্রিদমান সমীকরণ। তার পর বিশ্বতত্ত্ব নীতি এবং হোবল নীতি। সর্বশেষ ১৯৬০ সালে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিজ্ঞান যখন ক্লান্ত, তখন দেখা গেল আজ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ বছর আগেই বিশ্বস্রষ্টা তাঁর মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩০) أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلا يُؤْمِنُونَ
‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে সপ্তাকাশ ও পৃথিবী পুঞ্জীভূত হয়ে ছিল। অতঃপর আমি উভয়টি এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সূচনা করেছি।’
পৃথিবীর সৃষ্টি মহাকাশ সৃষ্টির আগে
মহাকাশ নাকি পৃথিবী? আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র, নাকি পৃথিবীর গাছপালা, কোনটি আগে সৃষ্টি হয়েছে? উত্তর খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না। আপনার ঘরের পবিত্র কোরআন খণ্ডটি হাতে নিন। তাতে চোখ বুলালেই দেখতে পাবেন, ‘আপনি বলুন, সত্যিই কি তোমরা সেই মহাপ্রভুকে অস্বীকার করছ! যিনি পৃথিবীকে মাত্র দুদিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তার অংশীদার নির্ধারণ করছ? তিনি তো সমস্ত জগতের প্রতিপালক। যিনি পৃথিবীতে তার উপরাংশে পাহাড় স্থাপন করেছেন এবং জমিনের ভিতরাংশ বরকতপূর্ণ করেছেন আর ভূগর্ভে সুষমরূপে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করেছেন মাত্র চার দিনে। সব যাচনাকারীর জন্য সমানভাবে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন আর তা ছিল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। (সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ৯-১১) এখানে পর্যায়ক্রমে প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি এরপর ভূগর্ভস্থ বিষয়াবলির আলোচনার পর আসমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ৯-১১)
قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَنْدَادًا ذَلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ (9)
وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ (10)
ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ (11)
৯ ) বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু'দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।
১০ ) তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে।
১১ ) অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।
পৃথিবীর পরিধি ক্রমে সংকীর্ণ হয়ে আসছে
পদার্থবিজ্ঞানীদের গবেষণামতে পৃথিবী তার সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পানির এক-চতুর্থাংশ পানি হারিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণামতে পৃথিবীর ভার বা ওজন (৫,৯৭২,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০) অর্থাৎ ৫ সেক্সটিলিয়ন ৯৭২ কুইন্টিলিয়ন। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিবছর পৃথিবী তার মোট ওজন থেকে ৫০০ টন ভার হারাচ্ছে। এ ছাড়া অক্সিজেনের ভাগ প্রতিনিয়ত কমে আসাও হালের বিজ্ঞানীদের কাছে স্বীকৃত বিষয়। যা থেকে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে পৃথিবীর পরিধি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে মহান আল্লাহ বলেন,
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪) بَلْ مَتَّعْنَا هَؤُلاءِ وَآَبَاءَهُمْ حَتَّى طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ أَفَلا يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا أَفَهُمُ الْغَالِبُونَ
‘তারা কি দেখে না আমি ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমেই সংকুচিত করে আনছি, এর পরও কি তারাই বিজয়ী!’
পৃথিবী দ্রুতগতিতে ছুটছে!
পবিত্র কোরআনে পৃথিবী স্থির কিংবা সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান কোনোটিই বলা হয়নি। বরং এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে যা এসেছে তার সারকথা হলো, পৃথিবী আপন কক্ষপথে দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটার মতো ঢেউ খেলে ছুটে চলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর চলন প্রকৃতি প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমত, পৃথিবীর নিজস্ব ঘূর্ণায়ন যা ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহান আল্লাহ যিনি আসমান জমিন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং দিনকে রাতের ওপর এবং রাতকে দিনের ওপর আচ্ছাদিত করেন।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫) আর এ কথা শিরোধার্য, কোনো বৃত্ত আকৃতির জিনিসকে অনুরূপ অন্য কোনো জিনিস দ্বারা বারবার আচ্ছাদিত করার জন্য, তা ঘূর্ণমান হওয়ার বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর সন্তরণ। বহুকাল যাবৎ মানুষ এ ধারণা পোষণ করে আসছে যে পৃথিবী সূর্যের পাশে ঘূর্ণমান। তবে খুব সাম্প্রতিক সময়ে মহাকাশ গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর চলার ধরনটাকে ঘূর্ণন শব্দে ব্যাখ্যা করা যথাযথ নয়। বরং পৃথিবীসহ আরো অনেক গ্রহ উপগ্রহ সর্বদা সূর্যকে ঘিরে সাঁতার কাটার মতো ওপর-নিচ ঢেউ তুলে সম্মুখপানে অগ্রসর হচ্ছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর আলোচনা টেনে বলেন, প্রত্যেকেই আপন কক্ষপথে সন্তরণ করছে। (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৪০)
পৃথিবীর নিচে বিপুল পানির উৎস
টিউবওয়েল চেপে পানি তুলছেন কিংবা পাম্পের সাহায্যে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন ভূগর্ভের এই বিপুল পরিমাণ পানির উৎস কোথায়? তাহলে জেনে নিন, মহান আল্লাহ বলেন,
(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১৮) وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَى ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
‘আমি আসমান থেকে পরিমাণমতো পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করে রাখি।’
‘আমি আসমান থেকে পরিমাণমতো পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করে রাখি।’
কোরআনে কারিমের যে আয়াতে আছে সব আরবি বর্ণমালা
কোরআনের ৪৮ নম্বর সূরা, সূরা ফাতহের ২৯ নম্বর আয়তে আরবি ভাষার ২৯টি বর্ণমালাই উল্লেখিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে তিনি সূরা ফাতহের ২৯ নম্বর আয়াতটি তেলাওয়াত করে শোনান। আয়াতটি হলো-
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
অর্থ : মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এবং তার সহচরগণ (সাহাবি) (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু ওরাদ্বু আনহ) কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন। তাওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে। চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে। যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের মনের জ্বালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।
এই আয়াতে আরবি সব বর্ণ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে কারিমের অনেক বিস্ময় ও রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। এগুলোর সামান্যই মানুষ বুঝতে সক্ষম। কোরআনের বিস্ময় ও রহস্য কখনোই শেষ হবে না, কিয়ামত পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে। সূরা ইউসুফের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, এ সূরায় ১১১টি আয়াত থাকা সত্ত্বেও ‘الجنة’ (বেহেশত) ও ‘النار’ (জাহান্নাম) শব্দ উল্লেখ নেই। তিনি বলেন, সূরা বাকারায় হাজারটি কর্মের নিষেধ ও হাজারটি কর্মের আদেশ এবং হাজারটি সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পবিত্র কোরআনে এমন (সূরা ইখলাস) সূরা রয়েছে, যা তিন বার পাঠ করলে পুরো কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। কোরআনেই রয়েছে মানুষের সফলতার চাবিকাঠি। মানুষের উচিৎ তা অন্বেষণ করা।
কোরআন ও হাদীস শরীফের মতে পীর মাশাঈখ ওয়ালী আওলিয়াগনের সাথে থাকার নির্দেশ .
ওয়ালী আরবী শব্দ যার অর্থ অভিভাবক বা মুরুব্বী, বন্ধু। আরবী ভাষায় “আউলিয়া” শব্দটি “ওয়ালী’র বহুবচন। ‘ওয়য়ীলী’ অর্থ বন্ধু,মিত্র বা অনুসারি। কখনো শব্দটির অর্থ হয় শাসক,অভিভাবক বা কর্তা। (তথ্যসূত্রঃ আরবী-বাংলা অভিধান,প্রকাশনায় ইসলামিকফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)। প্রসিদ্ধ আরবী-ইংরেজী অভিধান “আল মাওয়ারিদ” অনুসারে ওলি শব্দের অর্থঃ guardian, patron, friend companion ইত্যাদী।পবিত্র কোরআনে “ওলি” এবং “আউলিয়া” এ উভয় শব্দটির ব্যবহার হয়েছে অসংখ্য বার।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
সূরা ইউনুস ৬২- ৬৩। أَلا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ (62) الَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ (63)
” আলা ইন্না আওলিয়া আল্লাহি লা খাওফুন আ ’লাইহিম ওয়া লাহুম ইয়াহ্ঝানুন। আল্লাযীনা আ’মানূ ওয়া কানূ ইয়াত্তাকানূন।” অর্থ- “জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহর ওলিদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
(সূরা আল মায়িদা,আয়াত-৫৫-৫৬)”
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ (55)
وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ (56)
”নিশ্চয়ই তোমাদের ওলি হলেন আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আর ঈমানদার লোকেরা- যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দিয়ে দেয়, এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত বাধ্যগত থাকে। যারা ওলি মানে আল্লাহকে এবং আল্লাহর রসুলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে, তারাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই থাকবে বিজয়ী”।
এ দুটি আয়াত থেকে জানা গেল, সকল মুমিনই আল্লাহর অলি, যারা সালাত কায়েম করে,যাকাত প্রদান করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর অনুগত থাকে তারাই ওলি॥
”সকল মুমিনই আল্লাহ রহমানের অলি। (ইমাম তাহাবী ”আল আকীদা” গ্রন্থ)”
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
সূরা আলে ইমরান ৩ : ৬৮। إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِإِبْرَاهِيمَ لَلَّذِينَ اتَّبَعُوهُ وَهَذَا النَّبِيُّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ
আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
সূরা জাসিয়া ৪৫ :১৯। وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ “ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মুত্তাকীন “- আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩। يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
” আয়াতে দেখা যাচ্ছে আল্লা হ্তা’লা তাঁর
আওলিয়া বা বন্ধুদের প্রসংঙ্গে বলছেন, যে, তাঁর যারা বন্ধু তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। কারা তাঁর সেই বন্ধু?
আল্লাহ তায়ালা বলছেন যারা ঈমান আনবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে তারাই হবে তাঁর বন্ধু। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন , “তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।
” তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। সুতারং মুত্তাকী বা আমরা প্রচলিত ভাষায় যাকে বলি পরহেজগার সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে মর্যাদাসম্পন্ন। আবার এই মুত্তাকীদের মধ্যে যিনি অধিক মুত্তাকী তিনি আবার আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। এই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিটিই আল্লাহর বন্ধু সে কথাটিই আল্লাহ তায়ালা
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
সূরা ইউনুসের ৬৩নং الَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
সূরা হুজুরাতের ১৩ নং يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
আল্লাহ তায়ালা কাকে তাঁর বন্ধু হিসাবে গ্রহন করবেন বা করেছেনতা কিভাবে জানা যায় ? অর্থাৎ আল্লাহ এবং তার রাসুলের দেওয়া সঠিক পথে যারা থাকবে তারাই ওলি। তাহলে আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হওয়ার দাবীদার ব্যক্তিটি কিভাবে জানতে পারবেন।
এই বিষয়ে আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেন-
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভকরতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তারপা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা- দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। [বুখারী: ৬৫০২]
উপরোক্ত হাদিস খেকে দুটি বিষয় প্রতিয়মান হয়;ওলি হতে হলে ফরজ হকুম আহকাম পালনের পাশাপাশি যিনি নফল ইবাদত করবেন তিনি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু আর আল্লাহর বন্ধু কে? আল্লাহ বিভিন্ন কারামত প্রকাশের মাধ্যমে উনাকে প্রকাশ করান:
সুতরাং ওলি কে? তার সহজ উত্তর যারা ঈমান আনবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে তারাই হবে তাঁর বন্ধু। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন , “তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩। সূরা হুজুরাতের ১৩ নং يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
আর উনাদের প্রকাশ পায় কারামতের মাধ্যমে।তবে শতৃ আকিদা শুব্ধ থাকতে হবে!
*পবিত্র কোরআনের আলোকে সকল মুসলমানদের কে ওলি আওলিয়ার সাথে থাকার নির্দেশ:
# কুরআন হাদীসে পীর মুরিদীর প্রমাণঃ-
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
{সূরা তাওবা-১১৯) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
অনুবাদ-হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। এ আয়াতে কারীমায় সুষ্পষ্টভাবে বুযুর্গদের সাহচর্যে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
{সূরা ফাতিহা-৬,৭} اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
অনুবাদ- আমাদের সরল সঠিক পথ [সীরাতে মুস্তাকিম] দেখাও। তোমার নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ।
সূরায়ে ফাতিহায় মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর নিয়ামাতপ্রাপ্ত বান্দারা যে পথে চলেছেন সেটাকে সাব্যস্ত করেছেন সীরাতে মুস্তাকিম।
আর তার নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দা হলেন-
{সূরা নিসা-৬৯} وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا
অনুবাদ-যাদের উপর আল্লাহ তাআলা নিয়ামত দিয়েছেন, তারা হল নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, ও নেককার বান্দাগণ।
(সুরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৫৯) ।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
১) হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা ধর্মীয় নেতা ।
(বনি ইসরাইল, আয়াতঃ ৭১ )। يَوْمَ نَدْعُوا كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا
২) স্মরণ কর! সেই দিনকে যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাঁদের (ইমাম) নেতা সহ আহ্বান করব ।
(সুরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ৭১) ।
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
৩) মুমিন পুরুষ ও মুমিনা মেয়েলোকের ভিতর হতে কতেক কতেকের বন্ধু ।
(সুরাঃ আল-ইমরান, আয়াতঃ ১০৪) । وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
৪) তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে ।
(সুরাঃ ইমায়িন, আয়াতঃ ২১) । اتَّبِعُوا مَنْ لا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُمْ مُهْتَدُونَ
৫) অনুস্মরণ কর তাঁদের যারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাহে না, এবং যারা সৎ পথ প্রাপ্ত ।
(সুরাঃ লোকমান, আয়াতঃ ১৫। وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
৬) যে বিশুদ্ধ চিত্তে আমার অভিমুখি হয়েছে তাঁর পথ অনুস্মরণ কর ৭)
(সুরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ৭)। وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ
জিকির সম্বন্ধে তোমাদের জানা না থাকলে জিনি জানেন তাঁর নিকট হতে জেনে নাও ।
(সুরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ১১৯) । يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
৮) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (ছাদেকিন) সত্যবাদী গণের সঙ্গী হয়ে যাও ।
। (সুরাঃ আরাফ, আয়াতঃ ৫৬) । وَلا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا إِنَّ رَحْمَةَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
৯) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগনের নিকটবর্তী
(সুরাঃ কাহাফ, আয়াতঃ ১৭) ।
وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَتْ تَزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَتْ تَقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِنْهُ ذَلِكَ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ مَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا
১০) আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত হয় এবং তিনি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তাঁর জন্য কোন পথপ্রদর্শনকারী (অলি-মুরশিদ) পাবে না ।
(সুরাঃ ইউনুছ, আয়াতঃ ৬২-৬৪) ।
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ (62)
الَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ (63)
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ لا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (64)
৬২ ) মনে রেখো যারা আলাহ্র বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তানি¦ত হবে।
৬৩ ) যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে।
৬৪ ) তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আলাহ্র কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।
(সুরাঃ মায়েদা, আয়াতঃ ৩৫) । يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
১২) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর, এবং তাকে পাবার জন্য (নৈকট্য লাভের) অছিলা তালাশ কর ।
এ আয়াত একথাই প্রমাণ করছে যে, নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা হলেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, আর নেককারগণ, আর তাদের পথই সরল সঠিক তথা সীরাতে মুস্তাকিম। অর্থাৎ তাদের অনুসরণ করলেই সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলা হয়ে যাবে।
যেহেতু আমরা নবী দেখিনি, দেখিনি সিদ্দীকগণও, দেখিনি শহীদদের। তাই আমাদের সাধারণ মানুষদের কুরআন সুন্নাহ থেকে বের করে সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলার চেয়ে একজন পূর্ণ শরীয়তপন্থী হক্কানী বুযুর্গের অনুসরণ করার দ্বারা সীরাতে মুস্তাকিমের উপর চলাটা হবে সবচেয়ে সহজ। আর একজন শরীয়ত সম্পর্কে প্রাজ্ঞ আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তির সাহচর্য গ্রহণ করার নামই হল পীর মুরিদী।
*হাদীস শরীফে- আমার ও আমাদের প্রাণের আকা সাইয়্যিদুল মুরসালীন খাতামুন্নাবিয়্যিন রহমাতুল্লিল আলামীন শাফীউল মুজনিবীন শামসুল আরিফীন সিরাজুমমুনীর সাইয়্যিদুসসাকালাইন সাইয়্যিদুল কাওনাইন হাবীবুল্লাহ মাশুকুল্লাহ মাহবুবুল্লাহ তাজিদার-ই-মদীনাহ সরকার-ই-দূ’আলম নূর-ই-মুজাছছাম হাবীব-ই-কিবরিয়া নুরুন আলা নুর মোস্তাফ মুক্তাদা মুসাল্লা আহমদুল্লাহ মুন্তাহা মুজতাবা মাকরুনুন নুরুল হুদা মুবতাদা মুবাশ্শির বাশীর নাজীর মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা নাবীয়িনা শাফীয়িনা হাবীবিনা হুজুরে পরনুর (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দায়িমান আবাদা) একাধিক স্থানে নেককার ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
======================================
عن أبي موسى رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( مثل الجليس الصالح والسوء كحامل المسك ونافخ الكير فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحا طيبة ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك وإما أن تجد ريحا خبيثة )
অনুবাদ- হযরত আবু মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-সৎসঙ্গ আর অসৎ সঙ্গের উদাহরণ হচ্ছে মেশক বহনকারী আর আগুনের পাত্রে ফুঁকদানকারীর মত। মেশক বহনকারী হয় তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তুমি নিজে কিছু খরীদ করবে। আর যে ব্যক্তি আগুনের পাত্রে ফুঁক দেয় সে হয়তো তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে, অথবা ধোঁয়ার গন্ধ ছাড়া তুমি আর কিছুই পাবে না।
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫২১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৮৬০, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩১৯০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৩১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬১, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪২৯৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৬৬০, মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৭৭০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২৬২২, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৩৭৭, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৫১৫}
এছাড়াও অনেক হাদীস নেককার ও বুযুর্গ ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণের প্রতি তাগিদ বহন করে। আর সবচে’ বড় কথা হল-বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই দ্বীন বিমুখ। যারাও দ্বীনমুখী, তাদের অধিকাংশই কুরআন হাদীসের আরবী ইবারতই সঠিকভাবে পড়তে জানে না, এর অর্থ জানবেতো দূরে থাক। আর যারাও বাংলা বা অনুবাদ পড়ে বুঝে, তাদের অধিকাংশই আয়াত বা হাদীসের পূর্বাপর হুকুম, বা এ বিধানের প্রেক্ষাপট, বিধানটি কোন সময়ের জন্য, কাদের জন্য ইত্যাদী বিষয়ে সম্যক অবহিত হতে পারে না। তাই বর্তমান সময়ে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে নিজে বের করে আল্লাহ তাআলার উদ্দিষ্ট সীরাতে মুস্তাকিমে চলা বান্দার জন্য কষ্টসাধ্য। তাই আল্লাহ তাআলা সহজ পথ বাতলে দিলেন একজন বুযুর্গের পথ অনুসরণ করবে, তো সীরাতে মুস্তাকিমেরই অনুসরণ হয়ে যাবে।
কিন্তু কথা হচ্ছে যার অনুসরণ করা হবে সে অবশ্যই সীরাতে মুস্তাকিমের পথিক হতে হবে। অর্থাৎ লোকটি {মুরশীদ বা পীর} এর মাঝে থাকতে হবে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ। বাহ্যিক গোনাহ থেকে হতে হবে মুক্ত। কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে হতে হবে প্রাজ্ঞ। রাসূল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দায়িমান আবাদা) এর সুন্নাতের উপর হতে হবে অবিচল। এমন গুনের অধিকারী কোন ব্যক্তি যদি পাওয়া যায়, তাহলে তার কাছে গিয়ে তার কথা মত দ্বীনে শরীয়ত মানার নামই হল পীর মুরিদী। এরই নির্দেশ আল্লাহ তাআলা কুরআনে দিয়েছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
অনুবাদ-হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক। {সূরা তাওবা-১১৯)
*ওলিদের সাথে খাকলে উপকারিতা কি:
অলি=আওলিয়াদের ] (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু ওরাদ্বু আনহ) সাথে থাকা কোরআন হাদিসের নির্দেশ, ওয়াজিব সুচক।তাছাড়াও এর উপকারিতা কি?
যে ব্যক্তি যাকে ভালবাসে তার সাথেই হাশর হবে———————————–
“আসলে তোমাদের বন্ধু হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং সেই ঈমানদাররা যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহর সামনে বিনত হয়৷
আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে, তাঁর রসূলকে ও মুমিনদেরকে নিজের বন্ধু রূপে গ্রহণ করে তার জেনে রাখা দরকার, আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে৷” আল মায়েদাহ আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক বেদুঈন লোক রাসুলুল্লাহ (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দায়িমান আবাদা) কে জিজ্ঞেকরলেনঃ কিয়ামত কখন হবে? নবী ] (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি সম্বল সংগ্রহ করেছো? সে বললো, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের ভালবাসা। নবী (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দায়িমান আবাদা) বললেন, তুমি যাকে ভালবাসো তার সাথেই তোমার হাশর হবে।
(মুসলিম,৮ষ্ঠম খন্ড, হা/৬৫২১, বা, ই, সে)
আব্দুল্লাহ(রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দায়িমান আবাদা)! আপনি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে কি অভিমত পোষন করেন, যে কোন গোত্রকে ভালবাসে অথচ তারা যা করে সে তা করে না। রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বললেনঃ যে যাকে ভালবাসে সে (পরকালে) তার সাথে থাকবে।
(মুসলিম, ৮ষ্ঠম খন্ড, হা/৬৫২৯, বা, ই, সে,)
*আল্লাহর প্রিয় অলীগণ কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন:-
___________________________________ ____________________________ _______ দলীল 1 ﻭ ﺍﺫﺍ ﺭﺃﻭﺍ ﺍﻧﻬﻢ ﻗﺪ ﻧﺠﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﺧﻮﺍﻧﻬﻢ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﺧﻮﺍﻧﻨﺎ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭﻳﺼﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﻌﻤﻠﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﺍﺫﻫﺒﻮﺍ ﻓﻤﻦ ﻭﺟﺪﺗﻢ ﻓﻲ ﻗﻠﺒﻪ ﻣﺜﻘﺎﻝ ﺩﻳﻨﺎﺭ ﻣﻦ ﺍﻳﻤﺎﻥ ﻓﺎﺣﺮﺣﻮﻩ ﻭ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻮﺭﻫﻢ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻴﺎﺗﻮﻧﻬﻢ ﻭﺑﻌﻀﻬﻢ ﻗﺪ ﻏﺎﺏ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺍﻟﻲ ﻗﺪﻣﻪ ﻭ ﺍﻟﻲ ﺍﻧﺼﺎﻑ ﺳﺎﻗﻪ ﻓﻴﺨﺮﺟﻮﻥ ﻣﻦ ﻋﺮﻓﻮﺍ যখন মুমীন আল্লাহর অলীগণ দেখবে যে তারা মুক্তি পেয়ে গেল , তখন তাদের মুমীন ভাইদের জন্য তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে “হে আমার প্রতিপালক এরা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ তারা আমাদের সাথে নামাজ পড়ত , আমাদের সাথে রোজা রাখত এবং আমাদের সাথে সত্কাজ করত “। তখন আল্লাহ বলবেন “যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস । তাদের মুখমন্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে ” । অতঃপর তারা অলীগণ সেখানে জাহান্নামীদের নিকট যাবেন । এসে দেখবেন কেউ কেউ পা পর্যন্ত কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে । এর মধ্যে যাদের তারা কিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে । (সহীহ বুখারী , খন্ড ২ পৃষ্ঠা ১১০৭ । হাদীস নং ৭০০১) ___________________________________ ____________________________ _______ দলীল 2 ﻓﻮﺍﻟﺬﻱ ﻧﻔﺴﻲ ﺑﻴﺪﻩ ﻣﺎ ﻣﻮﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﺣﺪ ﺑﺎﺷﺪ ﻣﻨﺎﺷﺪﺓ ﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﺳﺘﻘﺼﺎﺀ ﺍﻟﺤﻖ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻮﻣﻨﻴﻦ ﻟﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻻﺧﻮﺍﻧﻬﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﺭﺑﻨﺎ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﻣﻌﻨﺎ ﻭ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻭ ﻳﺤﺠﻮﻥ ﻓﻴﻘﺎﻝ ﻟﻬﻢ ﺍﺣﺮﺟﻮﺍ ﻣﻦ ﻋﺮﻓﺘﻢ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ যখন তাদের ঐ সমস্ত মুমীন ভাই যারা জাহান্নামে পড়ে থাকবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য আল্লাহর দরবারে এমনভাবে আবদারের পর আবদার করতে থাকবে, যে রকম আবদার কোন ব্যক্তি তার নিজ হক আদায়ের জন্যও সাধারণত করে না । এবং তারা আল্লাহর দরবারে আবেদন করবেন হে আমাদের রব এ সমস্ত লোক আমাদের সাথে রোজা রাখত, নামাজ পড়ত, হজ্ব করত । তখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা যাদেরকে চিন তাদেরকে বের করে নিয়ে আস । (সহীহ মুসলিম । খন্ড ১ পৃষ্ঠা ১০৩ হাদিস ১৮৩)
*ওলি আওলিয়াদের সানিধ্য গেলে জান্নাত নিশ্বৎ হয়:-
হাদিস শরীফে হযরত আবু ছাইদ খুদরী ] (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু ওরাদ্বু আনহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- “ রাসুল (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দায়িমান আবাদা) ফরমান, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক লোক ছিল। সে ৯৯ ব্যক্তিকে হত্যা করার পর জিজ্ঞাসা করলো, এ পৃথিবীতে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি কে? তাকে এক রাহীব (ঈসায়ী ধর্মের শরীয়তের আলেম) এর সন্ধান দেয় হয়। সে তার কাছে এসে বললো যে, সে ৯৯ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এখন তার জন্য কি ক্ষমা আছে? ঐ আলেম বললো-না। তখন সে ঐ আলেমকে হত্যা করে ফেললো। অতএব সে ঐ আলেমের হত্যা দ্বারা ১০০ পূর্ণ করলো। তারপর সে আবার প্রশ্ন করলো এ পৃথিবীতে সর্বাধিক জ্ঞানী কে? তখন তাকে এক আল্লাহ্ ওয়ালা আলেম (অলী-আল্লাহ্) এর সন্ধান দেয়া হলো। সে আলেমকে বললো যে, সে ১০০ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। তার জন্য কি ক্ষমা আছে? আলেম ব্যক্তি বললেন- হ্যাঁ। তোমার ক্ষমা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই। তুমি ওমুক গ্রামে যাও। সেখানে কতিপর অলী-আল্লাহ্ এবাদতে নিয়োজিত আছেন। তুমিও তাঁদের সঙ্গে আল্লাহ্-র ইবাদতে মশগুল হয়ে যাও। নিজের দেশে আর কখনো ফিরে এসো না। কেনোনা, এ দেশটি বড় খারাপ। তারপর সে চলতে লাগলো। এমতাবস্থায় যখন সে অর্ধ পথ পৌছেছে তখন তার মৃত্যু হলো। এরপর (তাঁর রুহ নেয়ার ব্যপারে) রহমতের ফেরেশতা ও আজাবের ফেরেশতার মধ্যে তার সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। রহমতের ফেরেশতারা বললো – সে আল্লাহর ওলীর দিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আল্লাহ্-র দিকে তওবার জন্য ধাবিত হয়ে এসেছে ( সুতরাং সে মুক্তি পাবে)। আর আজাবের ফেরেশরা বললো, সে তো কখনো কোন নেক আমল করেনি,(সুতরাং, সে মুক্তি পাবেনা)। এ সময় (আল্লাহ্ র নির্দেশে) মানবরুপে এক ফেরেশতা আবির্ভূত হলেন। তারা তারা তাকে নিজেদের মধ্যে মীমাংসাকারী নির্ধারণ করলেন। তিনি তাদের বললেন, তোমরা উভয় স্থান মেপে নাও। উভয় স্থানের মধ্যে যে স্থানের দিকে সে অধিক নিকটবর্তী হবে তাকে সে স্থানের বলে গণ্য করা হবে। তারা জায়গা পরিমাপ করলো। তখন উদ্দিষ্ট স্থান মাপতে গিয়ে তারা দেখতে পেল যে, সে অলী-আল্লাহ্ গনের দিকে এক বিঘত কম গিয়েছে। তখন আল্লাহ্ র নির্দেশে জমি অলী-আল্লাহ্ গণের দিকে এক হাত পরিমান প্রশস্ত হয়ে যায়। এতে তারা তাকে অলী-আল্লাহ্ গণের নিতটবর্তী পেলো। তখন রহমতের ফেরেশতারা তাকে (আত্মা) নিয়ে গেলো।” (মুসলিম শরীফ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা-২৭৪, রিয়াদুস সালিহীন, পৃষ্ঠা-৩৫)।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment