WAJEHIA MOHAMMADIA TARICA - الطريقة الوجيهية المحمدية – ওয়াজীহিয়া মোহাম্মদীয়া ত্বরীক্বাহ

ওয়াজীহিয়া মোহাম্মদীয়া ত্বরীক্বাহ তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ====================== আকাইদের দৃষ্টিতে মুসলমানগণ প্রথমত: দুইভাগে বিভক্ত, মোহাম্মদী বা হুসাইনী ও ইয়াজিদী (হকপন্থী ও বাতিলপন্থী)। হকপন্থীদের অপর নাম ওয়াজীহিয়া মোহাম্মদীয়া ত্বরীক্বাহ তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। আহলে সুন্নাত ওয়াত জামায়াতের খেলাপ বা পরিপন্থী আকিদা যারা পোষণ করে, তারাই বাতিল, গোমরাহ বা বিদআতী ফেরকা। হকপন্থী একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্টিত থাকবে এবং তারা হযরত ইমাম মেহদী (আলাইহিস সালাম) এর সঙ্গি হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত সাওবান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে একখানা হাদিস মিশকাতশরীফের ৪৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন- ﻻﺗﺰﺍﻝ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻇﺎﻫﺮﻳﻦ ﻻﻳﻀﺮﻫﻢ ﻣﻦ ﺧﺎﻟﻔﻬﻢ ﺣﺘﻰ ﻳﺄﺗﻰ ﺍﻣﺮ ﺍﻟﻠﻪ – ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻮﺩﺍﺅﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ অর্থাৎ আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত হক বা সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে। তাদের বিরোধী কোন (বিদআতী) দল তাদেরকে তি করতে পারবে না। অনুরূপ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিস মিশকাত শরীফের ৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। রাসূলেপাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন- ﺍﻥ ﺑﻨﻰ ﺍﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﺗﻔﺮﻗﺖ ﻋﻠﻰ ﺛﻨﺘﻴﻦ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻣﻠﺔ ﻭﺗﻔﺘﺮﻕ ﺍﻣﺘﻰ ﻋﻠﻰ ﺛﻠﺚ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻣﻠﺔ ﻛﻠﻬﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺍﻻﻣﻠﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻣﻦ ﻫﻰ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﻣﺎ ﺍﻧﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﺻﺤﺎﺑﻰ- ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ অর্থাৎ ‘বনী ইসরাইল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে এবং একদল ব্যতীত বাকী সব দলই জাহান্নামী হবে, এতদ শ্রবণে সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই নাজাত বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন- ﻭﺍﺻﺤﺎﺑﻰ ﻣﺎ ﺍﻧﺎ ﻋﻠﻴﻪ ‘আমি এবং আমার সাহাবীগণ যে মতাদর্শের (যে আকিদার) উপর রয়েছি।’ (ইহাই নাজাতপ্রাপ্ত দল) উক্ত হাদিসশরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ মিরকাত নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ২০৫ পৃষ্ঠায় আল্লামা মূল্লা আলী ক্বারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) উল্লেখ করেন- ﻓﻼ ﺷﻚ ﻭﻻ ﺭﻳﺐ ﺍﻧﻬﻢ ﻫﻢ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ - অর্থাৎ ‘নিঃসন্দেহে উপরোক্ত হাদিসে উল্লেখিত নাজী বা বেহেশতী দলই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। আকাইদ বা কালাম শাস্ত্রের অন্যতম গ্রন্থ ‘শরহে আকাইদে নাসাফী’ নামক কিতাবের ৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- ﻣﺎ ﻭﺭﺩﺑﻪ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻣﻀﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻓﺴﻤﻮﺍ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ - অর্থাৎ ‘যা ‘সুন্নত’ দ্বারা প্রমাণিত এবং যার উপর ‘জামায়াতে সাহাবা’ প্রতিষ্ঠিত এরই নাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত।’ উল্লেখ্য যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সাহাবায়ে কেরামের আকাইদের অনুরূপ এবং তাদের আমলে আসল বা মূল সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পাওয়া যায়। বাতিলপন্থী বিদআতী ৭২ দলে বিভক্ত। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমদ মাহমুদ নাসাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাফসিরে মাদারিক’ নামক কিতাবের ২য় খণ্ড ৪০ পৃষ্ঠায় ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﺻﺮﺍﻃﻰ ﻣﺴﺘﻘﻴﻤﺎ ﺍﻟﺦ আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় নিম্বলিখিত হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন- ﺭﻭﻯ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧﻂ ﺧﻄﺎ ﻣﺴﺘﻮﻳﺎ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﻫﺬﺍ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﺮﺷﺪ ﻭﺻﺮﺍﻁ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻩ ﺛﻢ ﺧﻂ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﺳﺒﻴﻞ ﻣﻨﻬﺎ ﺷﻴﻄﺎﻥ ﻳﺪﻋﻮﺍ ﺍﻟﻴﻪ ﻓﺎﺟﺘﻨﺒﻮﻫﺎ ﻭﺗﻼﻫﺬﺓ ﺍﻻﻳﺔ ﺛﻢ ﻳﺼﻴﺮ ﻛﻞ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻻﺛﻨﻰ ﻋﺸﺮ ﻃﺮﻳﻘﺎ ﺳﺘﺔ ﻃﺮﻕ ﻓﺘﻜﻮﻥ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻻﻳﺎﺕ ﻣﺤﻜﻤﺎﺕ ﻟﻢ ﻳﻨﺴﺨﻬﻦ ﺷﺊ ﻣﻦ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﻜﺘﺐ - অর্থাৎ ‘বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই আমার ও আমাদের প্রাণের আকা সাইয়্যিদুল মুরসালীন খাতামুন্নাবিয়্যিন রহমাতুল্লিল আলামীন শাফীউল মুজনিবীন শামসুল আরিফীন সিরাজুমমুনীর সাইয়্যিদুসসাকালাইন সাইয়্যিদুল কাওনাইন হাবীবুল্লাহ মাশুকুল্লাহ মাহবুবুল্লাহ তাজিদার-ই-মদীনাহ সরকার-ই-দূ’আলম নূর-ই-মুজাছছাম হাবীব-ই-কিবরিয়া নুরুন আলা নুর মোস্তাফ মুক্তাদা মুসাল্লা আহমদুল্লাহ মুন্তাহা মুজতাবা মাকরুনুন নুরুল হুদা মুবতাদা মুবাশ্শির বাশীর নাজীর মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাইয়্যিদিনা নাবীয়িনা শাফীয়িনা হাবীবিনা হুজুরে পরনুর (সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দায়িমান আবাদা) একদা একটি সোজা রেখা টেনে বললেন, এটাই হেদায়েতের পথ ও আল্লাহর পথ তোমরা ইহাকে অনুকরন কর। অতঃপর সোজা রেখার উভয় পার্শ্বে আরও ছয়টি রেখা টানলেন, অতঃপর বললেন, এই প্রত্যেকটি রাস্তার উপর শয়তান অবস্থান করে তোমাদেরকে (পথভ্রষ্ট করার জন্য) তার দিকে ডাকছে। সুতরাং তোমরা উহা থেকে বেঁচে থাক। এ নির্দেশ দিয়ে উপরোক্ত আয়াতখানা তেলাওয়াত করলেন। অতঃপর ছয়টি রেখার প্রত্যেকটি রেখাতে ১২টি করে পথ চিহ্নিত করলেন। সুতরাং উহাদের প্রত্যেকটি ১২ ভাগে বিভক্ত হয়ে (৬*১২=৭২) দল হয়েছে।’ পীরানে পীর দস্তেগীর গাউছুল আ’জম শায়খ সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দল কাদির জিলানী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ‘গুনিয়াতু ত্বালিবীন’ নামক কিতাবের ১৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- ﻓﺎﺻﻞ ﺛﻠﺚ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻓﺮﻗﺔ ﻋﺸﺮﺓ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺨﻮﺍﺭﺝ ﻭﺍﻟﺸﻴﻌﺔ ﻭﺍﻟﻤﻌﺘﺰﻟﺔ ﺍﻟﻤﺮﺟﻴﺔ ﻭﺍﻟﻤﺸﺒﻬﺔ ﻭﺍﻟﺠﻬﻤﻴﺔ ﻭﺍﻟﻀﺮﺍﺭﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﺠﺎﺭﻳﺔ ﻭﺍﻟﻜﻼﺑﻴﺔ ﻓﺎﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻃﺎﺋﻔﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻭﺍﻟﺨﻮﺍﺭﺝ ﺧﻤﺲ ﻋﺸﺮ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺍﻟﻤﻌﺘﺰﻟﺔ ﺳﺖ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺍﻟﻤﺮﺟﻴﺔ ﺍﺛﻨﺎ ﻋﺸﺮ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺍﻟﺸﻴﻌﺔ ﺍﺛﻨﺘﺎﻥ ﻭﺛﻠﺜﻮﻥ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺍﻟﺠﻬﻤﻴﺔ ﻭﺍﻟﻨﺠﺎﺭﻳﺔ ﻭﺍﻟﻀﺮﺍﺭﻳﺔ ﻭﺍﻟﻜﻼﺑﻴﺔ ﻛﻞ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻭﺍﻟﻤﺸﺒﻬﺔ ﺛﻠﺚ ﻓﺮﻕ ﻓﺠﻤﻴﻊ ﺫﻟﻚ ﺛﻠﺚ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻓﺮﻗﺔ ﻋﻠﻰ ﻣﺎﺍﺣﺒﺮﺑﻪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺍﻣﺎ ﺍﻟﻔﺮﻗﺔ ﺍﻟﻨﺎﺟﻴﺔ ﻓﻬﻰ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ - অর্থাৎ ‘সহীহ হাদিসশরীফ মোতাবেক আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যতবানী অনুযায়ী আখেরী জামানায় মুসলিম উম্মাহর দল-উপদলের সংখ্যা ৭৩ (তেয়াত্তর)। যা মূলতঃ প্রধান দশটি দলের শাখা-প্রশাখা। ১। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ১ (এক) দল। ২। খারেজী (বহুবচন খাওয়ারিজ) ১৫ (পনের) দল। ৩। শিয়া ৩২ (বত্রিশ) দল। ৪। মু’তাজিলা ৬ (ছয়) দল। ৫। মুরজিয়া ১২ (বারো) দল। ৬। মুশাব্বিহা ৩ (তিন) দল। ৭। জাহমিয়া ১ (এক) দল। ৮। নাজ্জারিয়া ১ (এক) দল। ৯। দারারিয়া ১ (এক) দল। ১০। কালাবিয়াহ ১ (এক) দল। মোট ৭৩ (তেয়াত্তর) দল। উপরোক্ত ৭৩ (তেয়াত্তর) দলের মধ্যে কেবলমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নাজাতপ্রাপ্ত দল।’ প্রসঙ্গত একথা প্রনিধানযোগ্য যে, আশারিয়া মাতুরিদীয়া, চার মাযহাব যথা: হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী, চার তরিকা যথা: কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নক্সবন্দীয়া, মুজাদ্দেদীয়া, সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত। তাদের সকলের আকাইদ এক ও অভিন্ন। আকাইদে কোন প্রার্থক্য নেই, তাই তারা একই দলের মধ্যে পরিগণিত। এতদ্ব্যতিত বাকি উল্লেখিত ৭২ (বায়াত্তর) দলের সকলেই বাতিল ফেরকাভুক্ত ।